ববি মুরের সঙ্গে দাবা খেলায় ব্যস্ত বেকেনবাওয়ার। ফাইল চিত্র
মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য: বেকেনবাওয়ার যখন ফুটবলে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হচ্ছেন, তখন আমার আর কত বয়স! বড়জোর ১৬-১৭ হবে। কলকাতা ময়দানে সবে পা দিয়েছি। কলকাতা ময়দানে প্রতিষ্ঠিত হতে চাওয়া এক তরুণ ফুটবলারের কি চাওয়া থাকতে পারে শুরুর দিনগুলোতে! বড় বড় নামেদের অনুসরণ করা। বিশ্ব ফুটবলে বড় নাম তখন ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার।
কিন্তু সেই যুগে তাঁকে অনুসরণ করব কীভাবে? আজকের মতো আর টেলিভিশন ছিল না ঘরে ঘরে। রিমোটের একটা সুইচ টিপলেই পৌঁছে যাওয়া যেত না বায়ার্ন মিউনিখের মাঠে। ইন্টারনেট বলেও কোনও বস্তু ছিল না। অগত্যা ভরসা ছিল সকালের খবরের কাগজের লেখাগুলো। তাও খুব বেশি খবর থাকত না বিশ্ব ফুটবলের। আমি তবুও খুঁজতাম। সেই খোঁজার মধ্যে যে নামগুলো সবার আগে ছিল তাঁদের অন্যতম ছিলেন বেকেনবাওয়ার। কেন খুঁজব না, আমিও যে সেই সময় ডিফেন্ডার হিসাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার লড়াই শুরু করছি তখন।
পরবর্তীকালে অমলদার কাছে বেকেনবাওয়ারের খেলার ক্লিপ দেখেছি। অমলদা তখন বিশ্ব ফুটবলের ভিডিও জোগাড় করে সবাইকে দেখাচ্ছেন। আচ্ছা, একবারটি ভাবুন তো একটা মানুষ মাঠের মধ্যে যথার্থ নেতা হয়ে বিশ্বকাপ জেতাচ্ছেন। আবার সেই মানুষটাই পরবর্তীকালে কোচ হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন।
অনেকেই হয়তো আমার সঙ্গে একটি বিষয়ে সহমত হতে পারবেন না। তবে আমি নেতা বেকেনবাওয়ারকে পেলের থেকেও এগিয়ে রাখি। পেলে অনেক বড়মাপের ফুটবলার নিঃসন্দেহে। কিংবদন্তি। ফুটবল সম্রাট। কিন্তু একটা দলের যথার্থ নেতা হয়ে উঠতে পারেননি পেলে। নেতা হিসাবে বেকেনবাওয়ার তাঁর থেকেও এগিয়ে।
যে পজিশনটায় উনি খেলতেন সেই লিবেরো পজিশনে খেলতে গেলে একজন ফুটবলারকে অনেক ঠাণ্ডা মাথার পরিচয় দিতে হয়। তার পূর্বানুমান ক্ষমতা থাকতে হয় অনেক বেশি। রক্ষণ মানে শুধু বল উড়িয়ে খেলা নয়। স্ন্যাচ থেকে শুরু করে সঠিক পাস দিয়ে খেলা তৈরি করতেও হয় তাকে। কিন্তু জার্মান ফুটবলাররা তো লড়াইকেই বেশি গুরুত্ব দেন। মস্তিষ্কের ব্যবহার সেখানে কম। সেই লড়াই আর গায়ে গতরে ফুটবলের বাইরে গিয়ে মাথা ঠাণ্ডা রেখে একেবারে দেশীয় ফুটবলের যে ঘরানা তার বিপরীত স্রোতে হাঁটতেন বেকেনবাওয়ার।
এটা শেখার বিষয় ছিল আমার কাছে। আজ আফসোস করি, ইস! আমাদের সময় যদি বেকেনবাওয়ারের খেলা দেখার সুযোগ থাকত তাহলে হয়তো নিজেকে আরও উন্নত করতে পারতাম। বেকেনবাওয়ারকে নিয়ে যে সব মাঠের বাইরের বিতর্ক আলোচনা হয় তা নিয়ে আমি মাথা ঘামাতে নারাজ। পেলে, মারাদোনা, বেকেনবাওয়ারদের খেলা ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে মানুষের চর্চা হওয়া উচিত নয়। এই কিংবদন্তিরা আমাদের হৃদয়ে থাকবেন তাঁদের ফুটবল শিল্পের জন্য, কোনও বিতর্কের জন্য নয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.