Advertisement
Advertisement
AIFF

মহাসংকটে ভারতীয় ফুটবল, আইএসএলে ক্ষতি ৫ হাজার কোটি! ফেডারেশনের অর্থ বন্ধের ভাবনা এফএসডিএলের

গত ১৫ বছর ধরে চুক্তিমতো বার্ষিক ৫০ কোটি টাকা ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে দিয়ে আসছে এফএসডিএল।

FSDL and AIFF in dilemma over renewal of annual contract
Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:March 12, 2025 2:17 pm
  • Updated:March 12, 2025 2:17 pm  

দুলাল দে: এই বছরেই ডিসেম্বর মাসে শেষ হয়ে যাবে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে এফএসডিএলের দীর্ঘ ১৫ বছরের চুক্তি। আর সেই শর্ত মেনে চুক্তি নবীকরণ করার জন্য সবার আগে এফএসডিএলকেই প্রস্তাব দিয়েছে এআইএফএফ। যার ভবিষ্যৎ পথ তৈরির জন্য গত শুক্রবার মুম্বইয়ে এক মিটিংয়ে বসেছিলেন এফএসডিএল এবং ফুটবল ফেডারেশনের কর্তারা। মিটিংয়ে ঢোকার সময় যে হাসিমুখ ছিল ভারতীয় ফুটবল কর্তাদের, শোনা যাচ্ছে, মিটিং থেকে বেরোনোর পর সেই হাসি উধাও। এফএসডিএলর প্রস্তাব পেয়ে ফেডারেশন কর্তাদের সারা মুখে আশঙ্কার কালো ছায়া। এরপর কীভাবে চালাবেন ভারতীয় ফুটবল? অর্থ আসবে কোথা থেকে, কিছুই বুঝতে পারছেন না তাঁরা।

গত ১৫ বছর ধরে চুক্তিমতো বার্ষিক ৫০ কোটি টাকা ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে দিয়ে আসছে এফএসডিএল। আইএসএল হচ্ছে ১১ বছর। তার আগে প্রথম চার বছর আইএসএল না করলেও শুধু শুধুই বার্ষিক ৫০ কোটি টাকা করে দিয়েছে তারা। এই ১৫ বছরে জাতীয় দল, আইএসএল-সহ দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মার্কেটিং রাইটস রাখার পর যে হিসেব তারা কষছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে তাদের সঙ্গে আইএসএলের ক্লাবগুলি এবং ব্রডকাস্ট পার্টনারের মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০০০ কোটি টাকার মতো! যার মধ্যে এফএসডিএলের অপারেশনাল ক্ষতির পরিমাণ, প্রায় ২৮০০ কোটি টাকা! এত আর্থিক ক্ষতির পরেও গত ১১ বছর ধরে টানা আর্থিক ক্ষতি বহন করে গিয়েছে এফএসডিএল এবং আইএসএলের ক্লাবরা। ফলে নতুনভাবে চুক্তি নবীকরণ করতে গিয়ে ফেডারেশনের আর্থিক বিষয় নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলে অবাক করার মতো প্রস্তাব দিয়ে বসে আছে এফএসডিএল।

Advertisement

ফেডারেশন কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে শুরুতেই এফএসডিএল কর্তারা জানিয়ে দেন, ভারতীয় ফুটবলের প্রতিযোগিতার মধ্যে তারা শুধুই আইএসএল আয়োজন করতে আগ্রহী। আইলিগ, সুপার কাপ, সন্তোষ ট্রফি-সহ যে কোনও ধরনের জাতীয় প্রতিযোগিতার রাইটস, সব ছেড়ে দিচ্ছে ফেডারেশনকে। ভারতীয় ফুটবল কর্তারা এই প্রতিযোগিতাগুলি চালিয়ে ফেডারেশনের জন্য নিজেরাই অর্থ আয় করতে পারবেন। সেখান থেকে কোনও লভ্যাংশ দিতে হবে না এফএসডিএলকে। ফলে ভারতীয় ফুটবলের যে অংশ বারবার করে আওয়াজ তোলে আই লিগ, সন্তোষ ট্রফি নিয়ে ভারতীয় ফুটবল সমর্থকদের বিশাল আগ্রহ রয়েছে, এফএসডিএলের এই সিদ্ধান্তর পর ফেডারেশন কর্তাদের প্রমাণ করতে হবে, এই প্রতিযোগিতাগুলি থেকে এখনও স্পনসরশিপ থেকে বিশাল অর্থ পাওয়া যায়।

এফএসডিএল আইএসএল নিজেদের কাছে রাখার পাশাপাশি জাতীয় দলের রাইটস রেখে দিতেও আগ্রহী রয়েছে। সেকথা মিটিংয়ে তারা জানিয়েও দিয়েছে। এরকমটা যে হতে পারে, তা আগেই অনুমান করতে পেরেছিলেন ফেডারেশন কর্তারা। ভাবা গিয়েছিল, সেক্ষেত্রে ৫০ কোটির জায়গায় হয়তো অর্থর পরিমাণ কিছুটা কমানো হবে। কিন্তু মুম্বইয়ের মিটিংয়ে ফেডারেশন কর্তাদের অবাক করে তারা নতুন একটি ফরম্যাটের প্রস্তাব দেন। যেখানে প্রতিমাসে নির্দিষ্ট কোনও অর্থ দেওয়া হবে না ফেডারেশনকে। তার পরিবর্তে ইপিএল, লা লিগার মতো ফরম্যাটে চালানো হবে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ। যেখানে শেয়ার থাকবে সব পক্ষের। ফেডারেশন, ক্লাব, সম্প্রচারকারী সংস্থার পাশাপাশি লিগ প্রোমোটারের শেয়ার থাকবে আইএসএল পরিচালনায়। এই নতুন কোম্পানিতে যে লাভ হবে, তার ১৪ শতাংশ লভ্যাংশ পাবে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন। আর যদি কোনও লাভ না হয়, তাহলে কোনও অর্থই পাবে না।

এফএসডিএলের তরফে এই প্রস্তাব পেয়ে মাথায় হাত ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের। এফএসডিএলের তরফে কোনও অর্থ না পেলে কীভাবে চলবে ভারতীয় ফুটবল? তারা যে এফএসডিএলকে বাদ দিয়ে অন্য কোনও সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবে, এরকম কোনও বিকল্পও তাদের হাতে নেই। আবার এফএসডিএলকে ছেড়ে দিলে এককভাবে আইএসএল চালানোও সম্ভব হবে না ফেডারেশনের পক্ষে। ফলে ১৪ শতাংশ লভ্যাংশ শেয়ারের প্রস্তাব পেয়েও চূড়ান্ত কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না ফেডারেশন। কিন্তু চলবে কী করে ভারতীয় ফুটবল? এফএসডিএল কর্তারা জানিয়েছে, বাকি সব ফুটবলের রাইটস তারা ছেড়ে দিচ্ছে। সেগুলি স্পনসরারদের কাছে বিক্রি করে আর্থিক ভাবে লাভ দেখতে পারে ফেডারেশন।
তবে শোনা যাচ্ছে, এফএসডিএলের এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে অনেক কারণও রয়েছে। তারা ৫০ কোটি টাকা প্রতিবছর দিলেও ফেডারেশনের নানা খরচে তারা খুশি নয়। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে যেভাবে ফেডারেশনের বিভিন্ন আধিকারীকদের বেতন বাবদ বিশাল আর্থিক খরচ হচ্ছে, তা কেউই ভালোভাবে দেখছেন না। ফলে ফেডারেশনের বিভিন্ন কাজকর্মেও খুশি হতে পারছে না। সন্তোষ ট্রফি সৌদিতে করার মতো ফেডারেশনের একাধিক বাজে খরচ নজরে এসেছে এফএসডিএলের। তবে এসবই প্রাথমিক প্রস্তাব। এরপর এফএসডিএলের প্রস্তাব নিয়ে নিজেদের মধ্যে মিটিং করবেন ফেডারেশন কর্তারা। তারপর ফের এফডারেশনের তরফে পাল্টা প্রস্তাব যাবে। এখন দেখার সেই প্রস্তাব পাওয়ার পর এফএসডিএল কী সিদ্ধান্ত নেয়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement