ভারত -১ আফগানিস্তান -১
(আজিজি আত্মঘাতী) (হোসেন)
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আফগান গোলকিপার উভাইজ আজিজির মহাভুল। হাত ফস্কে বল চলে গেল নিজেদেরই জালে। ভারতীয় ফুটবলাররাও (Indian Football Team) তখন বুঝে উঠতে পারেননি কী হয়ে গেল। হতভম্ব আফগানরাও। আজিজির সেই ভুল ভারতের সামনে জয়ের রাস্তা খুলেই দিয়েছিল। কিন্তু বেশিক্ষণ সেই গোল ধরে রাখতে পারলেন না সন্দেশরা। হোসেন জামানির বাঁক খাওয়ানো শটটা গুরপ্রীত সিংয়ের নাগাল এড়িয়ে আশ্রয় নিল ভারতের জালে। তখনই জেতার আশা শেষ হয়ে যায়। সাইডলাইনের ধারে দাঁড়ানো ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্টিমাচ দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ। নিজের চোখকেও হয়তো বিশ্বাস করতে পারছিলেন না সেই মুহূর্তে। রেফারির শেষ বাঁশির পরে স্কোর লাইন বলছে ভারত ১ আফগানিস্তান ১।গ্রুপ ই-তে তৃতীয় ভারত। আর তার ফলে পৌঁছেও গেল এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারের (AFC Asian Cup Qualifier) তৃতীয় রাউন্ডে।
আফগানিস্তানের ৬ ফুটের দীর্ঘ গোলকিপারের জীবনে এই মেঘ তো এই রৌদ্র। সেই কোন ছোটবেলায় আফগান গৃহযুদ্ধে বাবাকে হারিয়েছেন। তার পর কখনও ইরান, কখনও ডেনমার্কে শরণার্থী হিসেবে দিন কাটিয়েছেন।মঙ্গলবার তাঁর কেরিয়ারে মেঘে আচ্ছন্ন একটা দিন। বাঁ দিক থেকে উড়ে আসা বলটা গ্রিপ করেও শেষ মুহূর্তে ডেকে আনলেন বিপদ। ভাগ্য ভাল বলতে হবে তাঁর।৮২ মিনিটে হোসেন জামানি সমতা ফেরান। নইলে এই ভুলের জন্য নিজেকে ক্ষমা করতে পারতেন না আজিজি। ম্যাচ ড্র হলেও অবশ্য ভারতকে থামানো যায়নি। এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারের তৃতীয় রাউন্ডে জায়গা করে নিল ইগর স্টিমাচের (Igor Stimach) দল।
মাত্র এক পয়েন্ট পেলেই এএফসি এশিয়ান কাপের তৃতীয় রাউন্ডে জায়গা করে নেবে ভারতীয় দল। এই অবস্থায় খেলতে নেমেছিল নীল জার্সিধারীরা। গত শুক্রবার ওমান ২-১ গোলে হারিয়েছে আফগানদের। ফলে ভারতের জন্য সমীকরণ হয়ে গিয়েছিল অনেক সহজ। ৯০ মিনিটের লড়াইয়ের শেষে সেই এক পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছাড়ল ভারত। ডাগ আউটে বসা সুনীল ছেত্রী মুখ ঢাকছেন হতাশায়। শেষ মুহূর্তে তাঁর দলের ডিফেন্স যদি থামিয়ে দিতে পারত ১৮ বছরের হোসেন জামানিকে, তাহলে হাসি মুখেই মাঠ ছাড়ত ভারত। কাতার বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল সুনীলদের সামনে। জাতীয় দলের খেলা দেখতে জাসিম বিন হামাদ স্টেডিয়ামে চলে গিয়েছিলেন সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট প্রফুল পটেল। শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে জেতা ম্যাচ ছেড়ে আসায় তিনি কি মনোক্ষুণ্ণ নন?
শুরুটা আক্রমণাত্মক মানসিকতা নিয়েই শুরু করেছিল ভারত। কিন্তু প্রথমার্ধের খেলা যত এগোতে থাকে, সেই আগ্রাসন কমতে থাকে। আফগান ফুটবলারদের শারীরিক সক্ষমতা বেশি। কিন্তু সৃজনশীলতা কম। ভারতের আক্রমণ সামলে বার কয়েক প্রতি আক্রমণে উঠলেও সৃজনশীলতার অভাবে সেই সব আক্রমণ থেকে গোলের দরজা খুলতে পারেননি।
অন্যান্য দিনের তুলনায় ভারতের ফুটবলাররা নিজেদের খোলসের মধ্যে ঢেকে রাখেননি। বরং বল দেওয়া নেওয়া করে অনেক সচল দেখাচ্ছিল দলটাকে। কাতার দারুণ শক্তিশালী দল। সেই কারণে তাদের বিরুদ্ধে রক্ষণাত্মক নীতি অবলম্বন করেছিল স্টিমাচের ভারত। তার উপরে দশ জনে নেমে গিয়েছিল তারা। বাংলাদেশ ম্যাচ জিতলেও ভারতের খেলা মন জিততে পারেনি অনেকেরই। সেদিক থেকে দীঘল চেহারার আফগানদের বিরুদ্ধে ভারতকে অনেক প্রাণবন্ত দেখিয়েছে। নিজেদের মধ্যে অনেক বেশি পাস খেলেছেন তাঁরা। এই ধরনের কঠিন ম্যাচে বিপক্ষের গোলের দরজা খোলা কঠিন হয়। ‘ডেড বল সিচুয়েশন’কে কাজে লাগাতে হয়।৬৭ মিনিটে সুনীল ছেত্রীর ফ্রি কিক অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তার পরেই ভারত অধিনায়ককে তুলে লিস্টন কোলাসোকে নামান স্টিমাচ। গোলটা আচম্বিতেই পেয়ে যায় ভারত। কিন্তু সেই গোলটা আর ধরে রাখা গেল না। হোসেন জামানি গোল করে আজিজিকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচালেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.