ফাইল ছবি
দুলাল দে: তথ্যপ্রমাণ এক জায়গায় করে অবশেষে সাফ কমিটিকে বিশাল এক আক্রমণাত্মক চিঠি পাঠালেন ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্টিমাচ। এই চিঠি পাঠানোর একটাই উদ্দেশ্য, কুয়েত ম্যাচে লাল কার্ড দেখার জন্য কোনওভাবেই যেন ম্যাচ নির্বাসনের সংখ্যা ‘এক’ থেকে বেড়ে গিয়ে ‘দুই’ না হয়। তাহলে লেবাননকে হারিয়ে ভারতীয় দল (Indian Football Team) ফাইনালে উঠলে সেমিফাইনালের মতো ফাইনালেও মাঠের বাইরেই থাকতে হবে ইগর স্টিমাচকে।
কুয়েত ম্যাচে লাল কার্ড দেখার জন্য শুধুমাত্র সেমিফাইনাল ম্যাচে নির্বাসন জানিয়ে বুধবারই সাফের তরফে চিঠি চলে আসে ভারতীয় কোচের কাছে। লাল কার্ড দেখার জন্য একটি ম্যাচে নির্বাসন ঠিকই আছে। কিন্তু গ্রুপ লিগের তিনটে ম্যাচের মধ্যে দুটো ম্যাচেই লাল কার্ড দেখার জন্য কুয়েত ম্যাচের রেফারি এতটাই কড়া রিপোর্ট দিয়েছেন যে, ইগর স্টিমাচের বিষয়টি সোজা সাফের ডিসিপ্লিনারি কমিটির কাছে যাচ্ছে। আর সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে, ভারতীয় দল ফাইনালে গেলে সেমিফাইনাল ম্যাচের মতো ফাইনালেও নির্বাসিত হয়ে ইগর স্টিমাচকে মাঠের বাইরে থাকতে হবে কি না?
কুয়েত ম্যাচের পরের দিনই বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপিংস ভালভাবে খতিয়ে দেখে ভারতীয় কোচ সিদ্ধান্তে আসেন, তাঁর অন্যায় মারাত্মক কিছু নয়। আর যে কারণে তাঁকে শাস্তির আওতায় পড়তে হয়েছে, সেই একই কারণে কুয়েতের একাধিক ফুটবলারেরও লাল কার্ড দেখা উচিত ছিল। কিন্তু অবাক করে রেফারি শুধুমাত্র কুয়েতের একজন ফুটবলারকেই লাল কার্ড দেখিয়েছেন। তাই সাফের ডিসিপ্লিনারি কমিটি তাঁর ব্যাপারে কোনও কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বিশাল এক যুক্তি নির্ভর চিঠি পাঠালেন সাফ কমিটির কাছে তিনি। যেখানে প্রমাণ স্বরূপ যাবতীয় ভিডিও ক্লিপিংস জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
শুরুতেই স্টিমাচ বিশ্বকাপে তাঁর ফুটবল কেরিয়ার এবং বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে ক্রোয়েশিয়ার মতো উন্নত ফুটবল দেশের কোচিং করানোর কথা উল্লেখ করে বলেছেন, তিনি সব সময় ফুটবলের ফেয়ার গেমের পক্ষে। কিন্তু কুয়েত ম্যাচে ভারতীয় দলের বিরুদ্ধে রেফারি যে সিদ্ধান্তগুলি নিয়েছেন, সেগুলির সঙ্গে তিনি একমত নন। প্রমাণ স্বরূপ প্রথম ঘটনায় বলেছেন, যেভাবে পিছন থেকে মেরে অনিরুদ্ধ থাপাকে কুয়েতের ফুটবলাররা ফেলে দিয়েছেন, সেটা অবশ্যই লাল কার্ড দেখার মতো ফাউল। অথচ সামান্য ট্যাকলে সন্দেশকে হলুদ কার্ড দেখানো হয়েছে। আর তাতে সন্দেশ সেমিফাইনালে খেলতে পারবেন না।
দ্বিতীয় পয়েন্টে লিখেছেন, মহেশের থ্রু ধরে অন সাইডে থেকে আশিক কুরুনিয়নের বল নিয়ে ঢুকে পড়া। অথচ রেফারি অফসাইডের সিদ্ধান্ত দেন। এই তথ্যগুলির সঙ্গে ভিডিও ক্লিপিংস জুড়ে দিয়ে তিনি উদাহরণস্বরূপ বুঝিয়েছেন, তাঁর দাবি মিথ্যে নয়। এরপর উল্লেখ করেছেন, কুয়েতের একজন ফুটবলারের তাঁর উদ্দেশে অশ্রাব্য গালিগালাজ করার প্রসঙ্গ। তিনি সেই ফুটবলারটিকে যে শান্ত হতে বলছেন,তার ছবিও চিঠির সঙ্গে দিয়েছেন স্টিমাচ। তাঁর বক্তব্য সঠিক প্রমাণ করার জন্য আরেকটি যে ছবি দিয়েছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, কুয়েতের ফুটবলারটি মুখে আঙুল দিয়ে উদ্ধত ভাবে চুপ করতে বলছেন স্টিমাচকে।
এরপর অবশ্য ভারতীয় কোচ স্বীকার করেছেন, যে ভাষায় ফুটবলারটি তাঁকে গালি দিয়েছেন, ঠিক সেই ভাষাতেই ফুটবলারটিকেও পালটা দিয়েছেন তিনি। অথচ চতুর্থ রেফারি শুধু ভারতীয় কোচের অপরাধের কথাই রেফারিকে বোঝান, আর তাতেই লাল কার্ড দেখতে হয় তাঁকে। এরপর একাধিক ছবি এবং ভিডিও ক্লিপিংস তাঁর চিঠির সঙ্গে জুড়ে দিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছেন, একটা সময় গোল শোধের আনন্দে কীভাবে কুয়েতের পুরো রিজার্ভ বেঞ্চে ভারতীয় দলের টেকনিক্যাল এরিয়ায় এসে অঙ্গভঙ্গি করেছে। অথচ একটা মাত্র হলুদ কার্ড দেখানো হয়েছে কুয়েতের গোলকিপারকে। এছাড়াও কুয়েতের কোচ বারবার টেকনিক্যাল এরিয়া ছেড়ে বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। অথচ চতুর্থ রেফারি একবারও সতর্ক করেননি তাঁকে। এখন সকলেই তাকিয়ে সাফের টেকনিক্যাল কমিটির দিকে।
তবে এই কার্ড ইস্যুতে যাতে অযথা আতঙ্কিত না হয় ফুটবলাররা, তার জন্য বৃহস্পতিবার সবাইকে ছুটি দিয়েছিলেন কোচ। স্ত্রী সোনমকে নিয়ে বাড়ি চলে যান সুনীল। চাপমুক্ত রাখতে অন্য ফুটবলাররা বেঙ্গালুরুর এদিক-ওদিক ঘোরেন। এদিকে শোনা যাচ্ছে, ভারত ফাইনালে পৌঁছে মাঠে উপস্থিত থাকবেন দুই প্রাক্তনী বাইচুং ভুটিয়া এবং আইএন বিজয়ন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.