সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চলে গেলেন ফুটবল সম্রাট। থেমে গেল দীর্ঘদিনের লড়াই। মৃত্যুকালে ব্রাজিলীয় তারকার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
কয়েকদিন আগেই পেলের কন্যা জানিয়েছিলেন, এবারের বড়দিন তাঁরা কাটাবেন হাসপাতালেই।আর কয়েকদিন বাদেই নতুন বছর। ‘নতুন সূর্য’ আর দেখা হল না ফুটবল সম্রাটের।
ফুটবল-বিশ্বকাপ চলাকালীন খবর হয়েছিল, পেলের অবস্থা সংকটজনক। সেই সময়ে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, মেগা শো-র মধ্যেই হয়তো শুনতে হবে হৃদয়বিদারক সংবাদটা। বিশ্বকাপ দিয়েই উত্থান পেলের। বিশ্বকাপেই তাঁর আবির্ভাব।সেই কারণেই হয়তো পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যাওয়ার জন্য বেছে নিলেন অন্য এক সময়। অন্য এক মুহূর্ত।
আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ের পরে তিনবারের ভুবনজয়ী বলেছিলেন, ”মেসিদের জয়ে দিয়েগো এবার খুব খুশি হবে।” দিয়েগো মারাদোনা ফুটবলের রাজপুত্র হিসেবেই পরিচিত। তিনি চলে গিয়েছেন দু’ বছর আগেই। এবার সম্রাটও ইহলোক ছেড়ে পরলোকে পাড়ি দিলেন। সম্রাট ও রাজপুত্রের এবার নিশ্চয় দেখা হবে অন্য এক ভুবনে।ফুটবল জগতের ইন্দ্রপতনে শোকস্তব্ধ মেসি-রোনাল্ডো-নেইমাররা। বিষণ্ণ গোটা ফুটবলসমাজ।
বিশ্বকাপ চলাকালীনই হাসপাতালে ভরতি করতে হয়েছিল পেলেকে।তাঁর সর্বাঙ্গ ফুলে গিয়েছিল। কেমোথেরাপিও কাজ করছিল না। শারীরিক সমস্যার জন্য ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করতে পারছিলেন না ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলার। সেই সঙ্গে ছিল হৃদযন্ত্রের সমস্যাও। ঠিক মতো চিনতেও পারছিলেন না তিনি। দীর্ঘদিন ধরে কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন পেলে। শারীরিক যন্ত্রণা উপশম করার জন্য তাঁকে রাখা হয়েছিল প্যালিয়েটিভ কেয়ারেও। জীবনে বহু কঠিন ম্যাচ জিতেছেন। হাতের বাইরে চলে যাওয়া ম্যাচও কোন জাদুবলে জিতিয়ে দিয়েছিলেন পেলে। কিন্তু ক্যানসারের সঙ্গে এই লড়াইয়ে আর জিততে পারলেন না তিনি। হার মানতে হল।
মাত্র ১৬ বছর বয়সেই ব্রাজিলের বিখ্যাত ক্লাব স্যান্টোস থেকে ফুটবল কেরিয়ার শুরু করেছিলেন পেলে। এই ক্লাবের নামের সঙ্গে সমার্থক হয়ে গিয়েছে তাঁর নাম। স্যান্টোসের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসাবে ইতিহাসে খোদাই হয়ে রয়েছে পেলের নাম। দীর্ঘ ১৯ বছর পরে এই ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে কসমসে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেই ক্লাবের হয়েই কলকাতায় এসেছিলেন পেলে। ইডেন উদ্যানে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলেছিলেন।
১৬ বছর বয়সেই জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয় পেলের। জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে গোল ছিল তাঁর। ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে যাত্রা শুরু হয় পেলে-গ্যারিঞ্চা অমর জুটির। জীবনের প্রথম বিশ্বকাপই রাঙিয়ে দিয়েছিলেন পেলে। ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ১৯৫৮ সালে। সোনা ফলানোর সেই শুরু। বর্ণময় ফুটবলার কেরিয়ারে তিন-তিনবার বিশ্বকাপ জিতেছেন। ১৯৭৭ সালে কসমসের হয়ে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলতে কলকাতায় পা রেখেছিলেন ফুটবল-সম্রাট। সেই ম্যাচে গোল করতে না পারলেও কলকাতার মন জিতে নিয়েছিলেন ‘ব্ল্যাক পার্ল’। অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই শয্যাশায়ী ছিলেন তিনি। বাড়ির বাইরে যাওয়া বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। বিশ্বকাপ শেষের পরেই এল সেই হৃদয়বিদারক খবর। তাঁর মেয়ে দিলেন সেই দুঃসংবাদ। সম্রাট আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.