কৃশানু মজুমদার: আর্জেন্টিনার (Argentina) কোচদের সঙ্গে রয়েছে কলকাতা-যোগ। ‘ফুটবলের মক্কা’র সঙ্গে কীভাবে জড়িয়ে পড়লেন লিও মেসিদের (Lionel Messi) বর্তমান কোচরা?
কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালের বল গড়াবে রবিবার। আর্জেন্টিনার মুখোমুখি ফ্রান্স। লুই সিজার মেনোত্তি, কার্লোস বিলার্দোর সঙ্গে একই ব্র্যাকেটে বসার সুযোগ লিওনেল স্কালোনির সামনে। আর্জেন্টিনা এক নতুন ভোরের অপেক্ষায়। স্কালোনির সহকারী পাবলো আইমার, আয়ালা। একসময়ে মেসির আদর্শ ছিলেন এই আইমার। স্কালোনি আবার ২০০৬ বিশ্বকাপে মেসির সঙ্গে জাতীয় দলে ছিলেন। মেক্সিকোর বিরুদ্ধে ম্যাচে খেলেছিলেন স্কালোনি ও মেসি। একসময়ের দুই সতীর্থের ভূমিকা এখন বদলে গিয়েছে। স্কালোনির তুরুপের তাস লিও মেসি। তিনিই স্কালোনির অকূলের কুল, অগতির গতি।
এটিকে-র (২০১৪, ২০১৬ সালে এই নামেই আইএসএল খেলত) প্রাক্তন দুই কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস ও হোসে মোলিনার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে স্কালোনি-আইমারদের নাম। সেই সূত্রে প্রত্যক্ষ ভাবে জুড়ে গিয়েছে কলকাতাও।
ফুটবলার জীবনে স্কালোনি খেলতেন স্পেনের ডিপোর্টিভো লা করুনিয়ায়। ১৯৯৮ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত এই ন’ মরশুম তিনি খেলেছেন ডিপোর্টিভোতে। খুব ছটফটে স্বভাবের ছিলেন স্কালোনি। ভ্যান গালের বার্সেলোনার বিরুদ্ধেও গোল রয়েছে তাঁর। রিয়াল মাদ্রিদের দৌড়ও থামিয়েছিলেন মেসিদের এখনকার কোচ।
এই ডিপোর্টিভোতেই ২০০০ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত খেলেছিলেন এটিকে-র প্রাক্তন কোচ। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের প্রতিনিধিকে তিনি বলছিলেন, ”স্কালোনির সঙ্গে আমি ছ’ বছর ডিপোর্টিভোতে খেলেছি। আমরা সতীর্থ ছিলাম।” হোসে মোলিনা এতদিন স্পেনীয় ফুটবল ফেডারেশনের স্পোর্টিং ডিরেক্টর ছিলেন। কাতার বিশ্বকাপে স্পেনের বিপর্যয়ের পরে কোচ লুইস এনরিকের চাকরি গিয়েছে। স্পোর্টিং ডিরেক্টরের পদ থেকে সরতে হয়েছে হোসে মোলিনাকেও। নতুন স্পোর্টিং ডিরেক্টর এসেছেন স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনে। মোলিনা অবশ্য বিশদে কিছু বলেননি স্কালোনি সম্পর্কে। ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত তিনি।
আর্জেন্টাইন ফুটবলের এক ভারী দুঃসময়ে দায়িত্ব নিয়েছিলেন স্কালোনি। অর্থের অভাবে বাইরে থেকে বিদেশি কোচ আনা সম্ভব হয়নি নীল-সাদা জার্সিধারীদের ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষে। স্কালোনি দলের পুনর্নির্মাণ করেন। বিশ্বকাপে এবার ফুল ফোটাচ্ছে স্কালোনির দেশ। ১৯৭৮ সালের ২৫ জুন আর্জেন্টিনা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সেই বিশ্বকাপ ছিল মারিও কেম্পেসের। তার মাস খানেক আগে জন্মান স্কালোনি। রাইট ব্যাক পজিশনে খেলতেন তিনি।
হোসে মোলিনা একবছরই এটিকের (২০১৪) দায়িত্বে ছিলেন। সেই অল্প সময়ে সাফল্য এনে দেন তিনি। তাঁর পরে আসে ‘ব্রিটিশ যুগ’। সেই সময়ে ব্যর্থতা সঙ্গী হয়। বাধ্য হয়ে ফেরানো হয় আন্তোনিও লোপেজ হাবাসকে। আইএসএলের প্রথম দুই সংস্করণে হাবাসের হাতে দলের রিমোট কন্ট্রোল ছিল। প্রথমবারেই দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন হাবাস। ২০১৯ সালে ফিরে এসেও দলকে চ্যাম্পিয়ন করেন স্পেনীয় কোচ। স্প্যানিশ লিগে হাবাসের ছাত্র ছিলেন স্কালোনির দলের দুই সহকারী পাবলো আইমার ও আয়ালা। কলকাতার বহু পরিচিত কোচ ছবি পাঠিয়ে এই প্রতিবেদককে বলছিলেন, ”আমি যখন ভ্যালেন্সিয়ার কোচ সেই সময়ে আইমার, আয়ালা ছিল দলে।” এখন অবশ্য পুরনো ছাত্রদের সঙ্গে আর যোগাযোগ নেই হাবাসের। যোগাযোগ না-ই থাকতে পারে তাঁর সঙ্গে কিন্তু রবিবার যখন স্কালোনি, আইমার, আয়ালারা বিশ্বজয়ের স্বপ্ন নিয়ে নামবেন লুসাইল স্টেডিয়ামে, তখন কি নস্ট্যালজিক হবেন না হাবাস? হোসে মোলিনা কি ফিরে যাবেন না ডিপোর্টিভোর সেই সব সোনালি দিনে?
বিশ্বকাপ ফাইনালে হাবাস-মোলিনা নেই। তাঁদের দেশ অনেক আগেই ছিটকে গিয়েছে। দেশবাসীর মতোই শোকে মূহ্যমান দুই কোচও। কিন্তু তাঁদের একসময়ের সতীর্থ, শিষ্যরা যে ভালমতোই রয়ে গিয়েছেন বিশ্বকাপ জেতার দৌড়ে। কোচ-টিমমেট হিসেবে এও তো কম তৃপ্তিদায়ক নয়। রবিবার টিভির পর্দায় হাবাস-মোলিনার চোখ যে খুঁজবে স্কালোনি-আইমারকে, এ কথা বলে দেওয়াই যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.