চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়: সাধারণত একটি মোমের মূর্তি তৈরিতে সময় লাগে দেড় মাস। কিন্তু মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে তৈরি করতে হয়েছিল মারাদোনার মোমের মূর্তি। অথচ সেই মূর্তি এতটাই সুন্দর হয়েছিল, যা দেখে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন স্বয়ং ফুটবলের ‘রাজপুত্র’ দিয়াগো মারাদোনাও (Diego Maradona)। নিজের মোমের মূর্তি দেখে সেটিকে জড়িয়েও ধরিয়েছিলেন তিনি। মারাদোনার প্রয়াণের পর সেই অতীত স্মৃতির কথাই জানালেন আসানসোলের মোম ভাস্কর সুশান্ত রায়।
জানালেন, অমিতাভ বচ্চন (Amitabh Bachchan), কপিল দেব (Kapil Dev), জ্যোতি বসুর (Jyoti Basu) মোমের মূর্তি তৈরি করে আগেই সাড়া ফেলেছিলেন। ২০০৮ সালে কলকাতায় এসেছিলেন মারাদোনা। তৎকালীন ক্রীড়া মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী সুশান্ত রায়কে দায়িত্ব দিয়েছিলেন মারাদোনার মোমের মূর্তি তৈরি করতে। কিন্তু হাতে তখন মাত্র ১৫ দিন। শিল্পী জানান, এত কম সময়ে মূর্তি তৈরি অসম্ভব। দেড় মাসের কম সময়ে মোমের মূর্তি তৈরি করা যায় না। তবু সুভাষ চক্রবর্তীর উৎসাহও আর শিল্পীর জেদ ও অদম্য ইচ্ছায় ১৫ দিনের মাথায় মোমের মূর্তির কাজ শেষ হয়। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে সেই মূর্তিটি শিল্পীই দেখান মারাদোনাকে। সুশান্ত রায় বলেন, বার বার ইংরেজিতে ‘থ্যাংক ইউ’ বলছিলেন মারাদোনা। আর দোভাষীর মাধ্যমে তিনি জানতে চেয়েছিলেন “হাইটটা কীভাবে পেলেন?”। সুশান্ত রায়ের আক্ষেপ ওই মূর্তিটি আর্জেনটিনা নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সুভাষ চক্রবর্তী হঠাৎ করে মারা যাওয়ায় সেই মোমের মূর্তিটি শিল্পীর কাছেই থেকে যায়। বর্তমানে মারাদোনার ছোঁয়া ওই মূর্তিটি কলকাতার ওয়াক্স মিউজিয়ামে রয়েছে।
বুধবার চিরতরে চলে গিয়েছেন ফুটবলের রাজপুত্র। মাত্র ৬০ বছর বয়েসেই স্তব্ধ হয়ে গেছে আর্জেন্টিনার এই ফুটবল তারকার স্পন্দন। ‘হ্যান্ড অফ গড’ গোল খ্যাত এই তারকা প্রায় দু’যুগ ধরে গোটা বিশ্বের ফুটবল প্রেমীদের মনে রাজত্ব করেছেন। আর রাতে মারাদোনার মৃত্যুর খবর পেয়ে ব্যথিত হন শিল্পীও। তিনি বলেন, ‘‘৬০ বছর বয়সটা মারা যাওয়ার নয়। আমরা অসময়ে ফুটবলের ঈশ্বরকে হারালাম।’’ সেই সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘সেদিন মোমের মূর্তির পায়ে যে ফুটবলটি ছিল, সেটি নিয়ে মারাদোনা খেলা করেছিলেন। ড্রিবলিং করেছিলেন। সেই ফুটবলটি আসানসোলে আমার কাছেই রয়েছে এখনও। মোমের মারাদোনা রয়েছে কলকাতায়। তবে আসল মানুষ চলে গেলেন ঈশ্বরের সমীপে।’’
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে সল্টলেক স্টেডিয়ামে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় এবং প্রীতি ম্যাচের আগে কলকাতার দর্শকরা ১০ মিনিটের জন্য তাঁর পায়ের জাদু দেখতে পান। তখনই তৈরি হয়েছিল মোমের মারাদোনা। ঈশ্বর নেই, কিন্তু ঈশ্বরের মূর্তি থেকে গেল। সাক্ষী থাকল আসানসোল (Asansol)।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.