ফাইল ছবি।
দুলাল দে: প্রথম মরশুমেই মহামেডান এমন ভাবমূর্তি করে ফেলেছে যে, মারাত্মক কিছু বদল না হলে, পরের মরশুমে আইএসএলে মহামেডানের খেলা প্রায় অসম্ভব মনে হচ্ছে। ফুটবলার থেকে ভেন্ডার। চারদিকে এত টাকা বাকি রয়ে গিয়েছে যে, আইএসএলের সংগঠক এফএসডিএলের অন্দরে ভীষণই খারাপ ধারণা তৈরি হয়েছে শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাব মহামেডান স্পোর্টিংকে (Mohammedan SC) নিয়ে। তাদের ধারণা, কোনও ক্লাবকে ঘিরে এরকম আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠলে ইন্ডিয়ান সুপার লিগের মতো একটি পেশাদার লিগ নিয়ে বিশ্বের দরবারের অত্যন্ত খারাপ বার্তা যাবে। ফলে আর্থিক সংক্রান্ত বিষয়ে আইএসএলের যে নিয়ম কানুন রয়েছে, তা কঠোর ভাবে প্রয়োগ করা হবে মহামেডানের ক্ষেত্রে। আর মহামেডানের যা অবস্থা, সেই আর্থিক নিয়ম কানুনের বেড়াজাল ডিঙিয়ে সামনের মরশুমেও আইএসএল খেলা এক প্রকার অসম্ভব। একই কথা প্রযোজ্য চার্চিল ব্রাদার্সের ক্ষেত্রেও। ফেডারেশন ঘোষণা করলেও আইলিগ চ্যাম্পিয়নশিপের ব্যাপারটা এখন আটকে রয়েছে ‘ক্যাস’-এ। সেখানে যদি চার্চিল ব্রাদার্স চ্যাম্পিয়ন হয়, সেক্ষেত্রেও আইএসএল খেলতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে পারে চার্চিল ব্রাদার্স। মহামেডানের মতো চার্চিলের আর্থিক পরিস্থিতিও খতিয়ে দেখবে এফএসডিএল।
ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের পর মহামেডান স্পোর্টিংও আইএসএলে চলে আসায় খুশি হয়েছিলেন বাংলার ফুটবলপ্রেমীরা। তড়িঘড়ি করে ক্লাবে এসে গিয়েছিল ইনভেস্টর ‘শ্রাচী’ও। কিন্তু শেষ পর্যন্তই সেই শ্রাচীই ডুবিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছে মহামেডানকে। ইনভেস্টর কর্তারা বলেন, শর্তমতো ক্লাবের থেকে কোনও শেয়ার পাননি। ওদিকে, ক্লাব বলছে, সেভাবে কোনও শর্তই ছিল না। কাগজপত্রে যাই থাক, ফুটবলার থেকে বিভিন্ন ভেন্ডারের কাছে কয়েক কোটি টাকা বাকি রেখে চলে গিয়েছে শ্রাচী। আইএসএল (ISL) খেলতে গেলে তার প্রভাব পড়বে মহামেডানের উপরে। কোচ-ফুটবলারদের এতটাই বেতন বাকি রাখা হয়েছে যে, তা ফিফা এবং ফেডারেশনে জরিমানা হয়ে অতিরিক্ত প্রায় ১২ কোটি টাকার মতো ক্ষতিপুরণ মেটাতে হচ্ছে মহামেডান কর্তাদের।
তবে ক্লাব কর্তারা শুধু কোচ-ফুটবলারদের বেতন নিয়েই ভাবছেন। ভেন্ডারদের আর্থিক ক্ষতি কী হবে? এতসব মেটানোর পর সামনের মরশুমে খেলার জন্য মহামেডানের () কাছে বিকল্প ভাবনা কী? সামনের মরশুম নিয়ে সাদা-কালো কর্তাদের সামনে যেরকম কোনও নিশ্চিত উত্তর নেই, মহামেডান স্পোর্টিংয়ের (Mohammedan SC) ভবিষ্যৎ নিয়ে এফএসডিএল কর্তাদের সামনেও সেরকম কোনও উত্তর নেই। এমনিতেই খরচ বাঁচানোর জন্য আইএসএলে দল সংখ্যা বাড়ানো নিয়ে প্রবল আপত্তি রয়েছে এফএসডিএলের। তার উপর এরকম আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত মহামেডান ক্লাবকে সামনের মরশুমেও আইএসএলে রাখার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ নেই তাদের।
আইএসএল খেলতে গেলে ক্লাবগুলিকে এফএসডিএলের নানারকম শর্ত পূরণ করতে হয়। তারমধ্যে আর্থিক শর্ত অন্যতম। যেখানে বিশাল অঙ্কের ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি দেখাতে হয়। শর্তর এই দিকটা থাকলেও এখনও পর্যন্ত খুব একটা প্রয়োগ করেনি এফএসডিএল। তবে মহামেডান যদি পরের মরশুমে আইএসএল খেলতে চায়, তাহলে ব্যাঙ্ক গ্যারান্টির ব্যাপারটি ভালভাবে দেখা হবে। কারণ, মরশুম শেষে ফের যদি ফুটবলার, ভেন্ডারদের টাকা বাকি থাকে, পরোক্ষভাবে তা আইএসএলের সুনামে কালি ছেটাবে। তবে আইএসএল খেলতে গেলে মহামেডানের দরকার বেশ বড় মাপের ইনভেস্টর। কোনওমতে সবাই মিলে টাকা জোগাড় করে আইএসএল খেলার চেষ্টা করলে, এফএসডিএল রাজি হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তবে শুধু মহামেডান নয়। লক্ষ্য রাখা হচ্ছে চার্চিল ব্রাদার্সের ক্ষেত্রেও। গোয়ার পারিবারিক ক্লাব চার্চিল ব্রাদার্স এই মরশুমেও বেশ কিছু ফুটবলারের বেতন এখন বাকি রেখেছে। আইএসএল খেলতে গেলে গোয়ার এই পারিবারিক ক্লাবকে পেশাদার পরিকাঠামোয় মুড়তে হবে। যা বেশ কঠিন ব্যাপার। ক্যাস এখনও আই লিগের চ্যাম্পিয়ন ক্লাব নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। ইন্টার কাশী চ্যাম্পিয়ন হয়ে আইএসএল খেলতে চাইলে কোনও সমস্যা হবে না এফএসডিএলের জন্য। কিন্তু চার্চিল চ্যাম্পিয়ন হয়ে আইএসএলে খেলতে চাইলে, মহামেডানের মতো তাদেরও কঠিন শর্তগুলি ঠিকঠাক পূরণ করতে হবে। নাহলে আইএসএল খেলা বিশ বাঁও জলে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.