মোহনবাগান–২(স্লাভকো, পেত্রাতোস)
ইস্টবেঙ্গল–০
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আইএসএল ডার্বিতে (ISL Derby) মোহনবাগানের জয়যাত্রা অব্যাহত। আইএসএলে আগের পাঁচটি সাক্ষাতে ইস্টবেঙ্গলকে পাঁচবারই হারিয়েছিল সবুজ-মেরুন। এদিন জুয়ান ফেরান্দোর দল ২-০ গোলে হারাল ইস্টবেঙ্গলকে।শনিবারের পর রেকর্ড বইয়ের পাতায় লেখা হয়ে থাকল, মেগা টুর্নামেন্টে ছ’টি সাক্ষাতে ছ’বারই মোহনবাগানের কাছে নাস্তানাবুদ হয়ে হেরেছে লাল-হলুদ শিবির।
এবারের আইএসএলে এটাই ছিল ইস্টবেঙ্গলের শেষ ম্যাচ। অনেক আগেই লাল-হলুদের আশা শেষ হয়ে গিয়েছিল। শেষ ম্যাচে একবার অন্তত জ্বলে উঠতে পারতেন ক্লেইটনরা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে শেষ করতে পারতেন আইএসএল অভিযান। অন্য সময়ের ইস্টবেঙ্গল হলে অবশ্য অসাধ্যসাধন করতে পারত। কিন্তু এই ইস্টবেঙ্গল নখদন্তহীন। চির আবেগের ডার্বি ম্যাচেও জ্বলে উঠতে পারেন না ফুটবলাররা। হারই এখন দস্তুর হয়ে গিয়েছে এই দলের। শনিবারের মহাম্যাচও তার ব্যতিক্রম নয়। একটা মুম্বই ম্যাচ জেতা আর চিরপ্রতিপ্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে খেলা এবং আধিপত্য দেখিয়ে ম্যাচ বের করে নেওয়া এক ব্যাপার নয়। ইস্টবেঙ্গল মাঠে প্রথম পা দিয়েই লাল-হলুদ কোচ কনস্ট্যান্টাইন বলেছিলেন, এই ইস্টবেঙ্গলকে ভয় পাবে সবাই। ২০ টা ম্যাচ খেলে ফেলল লাল-হলুদ শিবির। অতি বড় ইস্টবেঙ্গল সমর্থকও বলবেন না, প্রতিপক্ষের রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা আছে এই লাল-হলুদের।
মোহনবাগানের সমীকরণ অবশ্য অন্যরকম ছিল। অনেক আগেই প্লে অফের ছাড়পত্র জোগাড় করে ফেলেছিল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। এদিন জেতার ফলে লিগ তালিকায় তিন নম্বরে উঠে এল জুয়ান ফেরান্দোর ছেলেরা। মোহনবাগান কোচ ফেরান্দোকে নিয়েও কম চর্চা হয়নি। তাঁর দল টুর্নামেন্টের মাঝেই জেতার রাস্তা ভুলে গিয়েছিল। কিন্তু ঠিক সময়ে ম্যাচ জিতে প্লে অফের টিকিট জোগাড় করে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে খেলতে নামে মোহনবাগান। লাল-হলুদ শিবিরকে হারানোর ফলে ফেরান্দো আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে নিলেন। তাঁর দলও পেয়ে গেল অতিপ্রয়োজনীয় অক্সিজেন।
মোহনবাগানের হয়ে গোল করলেন স্লাভকো ড্যামজানোভিচ। গোল পেলেন পেত্রাতোসও। সব মিলিয়ে খুশি জুয়ান ফেরান্দো। তাঁর শরীরী ভাষাই বলে দিচ্ছিল সেই কথা। যদিও তাঁকে প্রথম গোলের জন্য অপেক্ষা করে থাকতে হয়েছে ৬৮ মিনিট। ওই ৬৮ মিনিটেই সার্বিয়ান স্লাভকো গোল করেন। তার আগে একাধিকবার ইস্টবেঙ্গলের পেনাল্টি বক্সে কাঁপুনি ধরায় মোহনবাগান। কিন্তু আসছিল না কাঙ্খিত গোল। সেই গোলটাই করলেন স্লাভকো। এটাই তাঁর প্রথম ডার্বি ম্যাচ। সার্বিয়ান সুপার লিগের ক্লাব নোভি পাজারের হয়ে খেলেছিলেন তিনি। সেখান থেকেই তিনি যোগ দেন ফেরান্দোর ব্রিগেডে। তাঁকে নেওয়া হয়েছিল পল পোগবার দাদা ফ্লোরেন্টিন পোগবার পরিবর্তে। তাঁকে দলে নিয়ে যে কর্তারা ভুল করেননি, সেটাই যেন প্রমাণ করলেন স্লাভকো।
পেত্রাতোসের কর্নার থেকে মনবীর সিংয়ের দুর্দান্ত ফ্লিক থেকে হেড করেছিলেন স্লাভকো। তাঁর হেড ইস্টবেঙ্গলের পোস্টে লেগে ফিরে এলে ফিরতি বল থেকে গোল করেন স্লাভকো। এক গোল হজম করার পরেও ম্যাচে ফেরা যায়। গোল করে সমতা ফেরানো সম্ভব। অতীতের বহু কলকাতা ডার্বিতে এমন দৃশ্য দেখা গিয়েছে। কিন্তু আইএসএলে অন্য ছবি। ইস্টবেঙ্গল সেই তাগিদ দেখাল না। জেক জার্ভিস এমন জায়গা থেকে বাইরে মারলেন, তা দেখে তাঁর কোচ কনস্ট্যান্টাইন মাথায় হাত দিলেন।
মোহনবাগান গোলের ব্যবধান বাড়াল ৯০ মিনিটে। গোলদাতা ‘ডার্লিং অফ দ্য ক্রাউড’ পেত্রাতোস। গোলের পরে তাঁর উচ্ছ্বাস এবং উদযাপনও ছিল দেখার মতো। নব্বই মিনিটের ঘাম ঝরানো লড়াইয়ের শেষে উদ্ভাসিত মোহনবাগান গ্যালারি। উচ্ছ্বল মোহনবাগান ফুটবলাররা। লাল-হলুদে তখন বিষাদ সিন্ধুর হাহাকার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.