মোহনবাগান ক্লাবে মা-বাবার সঙ্গে সম্পূর্ণা সিনহা।
প্রসূন বিশ্বাস: জীবনটাই পরীক্ষা। রোজই কত না কত উত্থানপতন থাকে। কিন্তু তার থেকেও কঠিন পরীক্ষা কোনটা? অঙ্ক পরীক্ষার থেকেও কোন দিনটায় ধুকপুকানি বেশি বেড়ে যায়? সম্পূর্ণার কাছে উত্তরটা খুব সহজ, মোহনবাগানের লিগ শিল্ড জয়ের ম্যাচের দিন। অঙ্ক পরীক্ষার ঠিক দুদিন আগে মোহনবাগানের ম্যাচ দেখতে যুবভারতীতে হাজির হয়েছিল সম্পূর্ণা সিনহা। ফলাফল? একদিকে সবুজ-মেরুনের লিগ শিল্ড জয়। আর অন্যদিকে ৯৯.৬ শতাংশ নিয়ে আইসিএসই-তে দশম শ্রেণির পরীক্ষায় তৃতীয় হয়েছে সে। সোমবার ক্লাব তাঁবুতে সম্পূর্ণাকে সংবর্ধিত করল মোহনবাগান।
শুধু অঙ্ক পরীক্ষা নয়, সবকটা পরীক্ষার মধ্যেই মোহনবাগানের ম্যাচ ছিল। আর তার মধ্যে যেকটা যুবভারতীতে হয়েছে, তার প্রায় সবগুলোতেই উপস্থিত ছিল সম্পূর্ণা। তবে বাকিগুলোতে তাও কিছুটা সময় পেয়েছে, কিন্তু অঙ্ক পরীক্ষা ছিল শিরে সংক্রান্তি। তাতে কী! মোহনবাগানের ম্যাচ বলে কথা। লেক টাউনের মেয়ে সাক্ষী থেকেছিল ওড়িশার বিরুদ্ধে পেত্রাতোসের ৯৩ মিনিটের গোলের।
কঠিন পরীক্ষার আগে এরকম ম্যাচ দেখতে যাওয়ায় কেউ বাধা দেয়নি? বাধা দেবে কে? তার বাবা সুপ্রিয়া সিনহা নিজেই যে আদ্যোপান্ত মোহনবাগান সমর্থক। সম্পূর্ণার বক্তব্য, “আমার মা-বাবা সব সময় সমর্থন করে। যদি সারা বছর পড়াশোনা করি, তাহলে পরীক্ষার আগের দিন কী করলাম, সেটার সেভাবে গুরুত্ব থাকে না। বাবা-মা কিছু বলে না। তবে দাদু-দিদা মাঝেমধ্যে বলে। আমিও বলি, লিগ শিল্ডের ম্যাচ তো বছরে একবারই আসবে। সারা জীবনটাই তো পরীক্ষা। সে তো বারবার আসবে।” ডিপিএস নিউটাউনের ছাত্রীর কথা, “পরীক্ষার থেকেও বেশি দুশ্চিন্তা থাকে মোহনবাগানের ম্যাচ নিয়ে।”
ভবিষ্যতে স্পোর্টস মেডিসিন বা স্পোর্টস সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় সম্পূর্ণা। কিন্তু যদি পেশাগত কারণে প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব ইস্টবেঙ্গলে কাজের সুযোগ আসে? সম্পূর্ণার সাফ উত্তর, “আমি জন্ম থেকে মোহনবাগান সমর্থক। মোহনবাগানই আমার একমাত্র পরিচয়। আমি সব সময় মোহনবাগানেই থাকব।” সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে ইস্টবেঙ্গল সব দিক থেকেই মোহনবাগানের থেকে পিছিয়ে। তাই ডার্বির আগে-পরে স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে তর্কে সম্পূর্ণারই জিত। তবে এখন তো ডার্বিতেও বাঙালি প্লেয়ার অনেকটাই কমে গিয়েছে। তাই সম্পূর্ণা বলে, “বাংলার নতুন প্লেয়ার উঠে আসুক। আগামী মরশুমে আরও অনেক ভারতীয় প্লেয়ার সুযোগ পাক। আইএসএলে সেটা হলে সবার জন্য ভালো হবে।”
তার বাবা সুপ্রিয় সিনহা ১৯৯৫ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। আশ্চর্যের বিষয়, সেই সময় তিনি মাধ্যমিকে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। তখন মোহনবাগান ক্লাবের তরফ থেকে তাঁদের বাড়িতে মিষ্টি পাঠানো হয়েছিল। আর মেয়ে সংবর্ধনা পেল মোহনবাগান ক্লাবে এসে। সুপ্রিয় বাবু বলেন, “এটা অনেক বড় প্রাপ্তি। ও আমাকে ছাপিয়ে গিয়েছে।” এদিনের অনুষ্ঠানে তার শুভলক্ষ্মী সিনহাও এসেছিলেন সবুজ-মেরুন শাড়ি পরে। বাবার গায়ে মোহনবাগানের জার্সি। আর সব শেষে মা ও বাবার সঙ্গে ক্লাব প্রাঙ্গণে ছবি। পিছনে লেখা ‘আই লাভ মোহনবাগান’। এক ফ্রেমে সম্পূর্ণার গোটা জগৎ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.