স্টাফ রিপোর্টার : মোহনবাগান নির্বাচনের আগে বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর পিছনে বিজেপির মদতের বিষয়টি আর আড়ালে নেই। বিজেপি নেতা, এআইএফএফ সভাপতি কল্যাণ চৌবের স্ত্রী সোহিনীকে সামনে রেখেই গেরুয়া শিবির মদত দিচ্ছে বর্তমান সচিব দেবাশিস দত্তকে। যে আঁতাতের কথা ‘সংবাদ প্রতিদিন’ প্রকাশ্যে আনতেই আলোড়ন পড়েছে ময়দানে। কিছুদিন আগেই মানিকতলায় বিজেপির হয়ে প্রচার করা সোহিনীকে ঢাল করে বর্তমান সচিবকে গেরুয়া শিবিরের মদতের কথা প্রকাশ্যে আসায় তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে মোহনবাগান সদস্য-সমর্থকদের মধ্যে।
মোহনবাগান নির্বাচনে দেবাশিস দত্তের হয়ে ইতিমধ্যে জোরকদমে প্রচারে নেমে পড়েছেন বিজেপি নেতা, এআইএফএফ-র সভাপতি কল্যাণ চৌবের স্ত্রী সোহিনী। বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেবাশিস-সোহিনী জুটিকে একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে, কারণ সোহিনীকে ভরসার কেন্দ্র হিসাবে দেখছেন মোহনবাগান সচিব। ইতিমধ্যে দেবাশিস প্রশ্ন তুলেছেন, সিপিএমের কিছু সমর্থক মোহনবাগানে কেন সক্রিয় হবেন? এমন প্রশ্নের সপাট জবাব দিয়েছেন মোহনবাগানের প্রাক্তন সচিব সৃঞ্জয় বোস। তাঁর কথায়, “মোহনবাগানে সব দলের মানুষ থাকতেই পারেন। মনে রাখতে হবে, আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে বহু ক্লাবের ক্রীড়া-পরিকাঠামো গড়ে দিচ্ছেন। ময়দানে উন্নয়নের নতুন অভিমুখ গড়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর অন্য রাজনৈতিক দলের সমর্থকরা যদি মোহনবাগানে সমর্থক হয়ে আসেন তাতে কারও আপত্তি থাকবে কেন?” তবে এদিকে যাঁরা খোঁচাচ্ছেন, তাঁদের হয়ে বিজেপি-সিপিএমের একাংশ অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রে পরপর পদ্মচিহ্ন নিয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে গোহারা হওয়া কল্যাণ চৌবের স্ত্রী সোহিনী একদিকে যেমন বিজেপির সক্রিয় প্রচারক, অন্যদিকে দেবাশিসকে নানাভাবে ‘প্রমোট’ করছে গেরুয়া শিবির। আর এই সত্যকে আড়াল করতে ঘুরপথে এই সময়ের একটি দৈনিক পত্রিকা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পক্ষপাতমূলক প্রচার করে বিজেপির হাত শক্ত করছে।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে দেখা যাচ্ছে, এই সোহিনী একদিকে বিজেপির হয়ে যেমন লাগাতার প্রচার করে চলেছেন, আবার তিনিই দেবাশিস দত্তর হয়ে লাগাতার ‘ক্যাম্পেন’ করছেন। পূর্ব বর্ধমানের একটি নির্বাচনী প্রচার সভায় দেবাশিসের সমর্থনে ঝাঁঝালো বক্তব্য রেখেছেন সোহিনী। বস্তুত এমনই প্রেক্ষাপটে ‘সংবাদ প্রতিদিন’ বাস্তব তথ্য তুলে ধরলে মুখরক্ষায় আইনি নোটিস দিয়েছেন দেবাশিস দত্ত। দুঃখের কথা, মোহনবাগান নিয়ে যখন এই সময়ের একটি দৈনিকে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ হলেও সেখানে কোনও প্রতিবাদপত্র দিচ্ছেন না। এর থেকে প্রমাণিত হচ্ছে, এই সময়ের ওই দৈনিকটির প্রতি দেবাশিসের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। ঘুরিয়ে বললে, বিজেপি মোহনবাগান নির্বাচনে প্রার্থী দেবাশিস দত্তকে সমর্থন করছে। এদিন দেবাশিস যে আইনি চিঠি দিয়েছেন, তারও কড়া উত্তর আইনজীবী মারফত পাঠিয়ে দিয়েছেন সৃঞ্জয়। বলেছেন, “বিভ্রান্তিকর প্রচার বন্ধ করুন। ভিত্তিহীন কোনও প্রচার করবেন না।” পাল্টা মানহানি মামলা করার কথাও ভাবছেন সৃঞ্জয়।
এদিকে মোহনবাগান নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক প্রচার শুরু করে দিয়েছে সৃঞ্জয় বোসের শিবির। বাগুইআটিতে এদিন মোহনবাগান সদস্য ও সমর্থকরা সৃঞ্জয়ের সমর্থনে বিশাল সভা করেন। সেখানে বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমার বাবা বলতেন তিনজন বোসকে কখনও ভুলবে না। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস, জ্যোতি বোস এবং টুটু বোস। মোহনবাগানের প্রতি টুটু বোসের যা অবদান তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আর তাঁর ছেলে টুম্পাই যখন আমাকে ফোন করে, আমার মনে হল, অমিতাভ বচ্চনের মতো কেউ আমাকে ফোন করল। মোহনবাগান ক্লাবে তাঁদের যা অবদান তাতে আমি সত্যিই আনন্দিত।” এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিধাননগর পুরনিগমের মেয়র পারিষদ দেবরাজ চক্রবর্তী, আরাত্রিকা চট্টোপাধ্যায়, কাউন্সিলর পার্থ সরকার, সন্দীপ বাগুই, পিয়ালী সরকার সহ অন্যরা। ছিলেন মোহনবাগানের দুই প্রাক্তন ফুটবলার শিশির ঘোষ ও শিল্টন পাল সহ অগণিত সবুজ মেরুন সমর্থক। অন্যদিকে হাওড়ায় আজ, রবিবার সদলবলে নির্বাচনী প্রচারে যাচ্ছেন সৃঞ্জয় বোস। সেই সভার প্রস্তুতিতে শনিবার বিশাল কর্মিসভা করেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়। জেলা তৃণমূলের সদর কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভা শেষে এদিন মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “মোহনবাগান ক্লাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন টুটু বোস। সৃঞ্জয়ের হাত ধরে অনেক লড়াই করে মোহনবাগান ক্লাব এই জায়গায় পৌঁছেছে। আর তাই মোহনবাগান নির্বাচনে এবার সৃঞ্জয়ের প্যানেলকেই জেতাতে হবে।” এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী আরও বলেন, “এমনিতেই টুটু বোসরা যেহেতু হাওড়ার আদি বাসিন্দা, তাই এখানে তাঁদের ঘিরে একটা আলাদা আবেগ রয়েছে। হাওড়ায় দু’হাজারের বেশি মোহনবাগানের সদস্য আছেন। ভোটে সকলেই সৃঞ্জয়কে সমর্থন করব।” সৃঞ্জয়ের প্রচার সভার সমর্থনে প্রস্তুতিসভায় অন্যদের মধ্যে ছিলেন অসিত চট্টোপাধ্যায়, দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, ফুটবলার বলাই দে, দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মতো মোহনবাগানের কট্টর সদস্যরা। এমনকী মোহনবাগানের বর্তমান কর্মসমিতির একাধিক সদস্যকেও দেখা গিয়েছে এদিনের কর্মিসভায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.