সুলয়া সিংহ ও অর্পণ দাস: মোহনবাগান নির্বাচনে সৃঞ্জয় বোসের হয়ে প্রচারে নামছেন ক্লাবের সদ্যপ্রাক্তন সভাপতি তথা সমর্থকদের প্রাণের প্রিয় টুটু বোস। ছেলের হয়ে ভোট প্রচার করবেন বলেই সভাপতি পদ ছেড়েছেন তিনি। শনিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন টুটু বোস। ক্লাবের বর্তমান সচিব দেবাশিস দত্তকে নাম না করে নিশানা করে টুটুবাবু আক্ষেপের সুরে বলে গেলেন, ক্লাবের নির্বাচনকে ঘিরে তাঁর পরিবারেও ফাটল ধরানোর চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সে অপচেষ্টা কোনওদিন সফল হবে না।
শনিবার বালিগঞ্জের বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করে টুটুবাবু বলেন, “নৈতিকতার কারণে সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা। পদে থাকলে নৈতিকভাবে ইলেকশনে থাকা উচিত নয়। এবার পুরোপুরি টুম্পাইয়ের (সৃঞ্জয় বোস) সঙ্গ দেব।” নিজে নির্বাচনে না লড়লেও সশরীরে সৃঞ্জয় বোসের হয়ে প্রচার করবেন। বয়সের ভার এবং অশক্ত শরীর নিয়ে দরকারে হুইলচেয়ারে বসেও প্রচারে যাবেন তিনি, ঘোষণা টুটুবাবুর। প্রাক্তন মোহনবাগান সভাপতি বললেন, “সৃঞ্জয়কে ভোট দেওয়া মানেই আমাকে ভোট দেওয়া। হাতজোড় করে বলছি, আমাকে ভোট দিন।” টুটু বোসের এই ঘোষণায় মোহনবাগান নির্বাচনে সৃঞ্জয় ভালোরকম অ্যাডভান্টেজ পেয়ে যাবেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
একটা সময় যে দেবাশিস দত্তকে তিনি হাত ধরে মাঠে এনেছেন, সেই দেবাশিস কেন আজ বোস পরিবারের বিরোধী শিবিরে? প্রশ্নের জবাব টুটু বোস বলে দিলেন, “বসু পরিবারের হাত ধরে এসেছ মাঠে। আমি নিয়ে এসেছি। অঞ্জন তাকে সাহায্য করেছে। কিন্তু এখন কারওর লোভ এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে যে পয়েন্ট অফ নো রিটার্নে পৌঁছে গিয়েছে।” টুটু বোসের সাফ কথা, “কারও কারও লোভ কন্ট্রোল করা যায় না। এটা আমার ব্যর্থতা। মানুষ চিনতে একটু ভুল হয়েছে।” ক্লাবের বর্তমান সচিবের পারফরম্যান্স নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন টুটুবাবু। তাঁর প্রশ্ন, “ওঁর কী পারফরম্যান্স আছে? কী কৃতিত্ব? যে ট্রফিগুলি ১ বৈশাখ ক্লাবে সাজানো ছিল, সেগুলির কৃতিত্ব সঞ্জীব গোয়েঙ্কার। আর সঞ্জীব গোয়েঙ্কাকে এনেছে কে? সেটার কৃতিত্ব কার প্রাপ্য? আজকের দিনে ক্লাব চালাতে ৭০-৭৫ কোটি টাকা খরচ হয়। এমন লোককে দরকার ছিল, যে কলকাতার, যার প্যাশন আছে। পালিয়ে যাবে না। আমার সঙ্গে গোয়েঙ্কার আলাপ ছিল৷ সেই জন্য গাঁটছড়া।” এরপরই নাম না করে দেবাশিসের উদ্দেশে তাঁর কটাক্ষ, “সেই সময় কারা বাধা দিয়েছিল বলতে চাই না।”
টুটুবাবুর বক্তব্য, দেবাশিসের অনেক আচরণ তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে দুঃখ দিয়েছে। যে কাজটায় সবচেয়ে বেশি দুঃখ তিনি পেয়েছেন, সেটা হল তাঁর পরিবারে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা। টুটুবাবু এদিন সাংবাদিক বৈঠকে বললেন, “আমার পরিবারে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা হয়েছে। যে বসু পরিবারকে ধ্বংস করতে গেছে। সে তাড়াতাড়ি করে ফেলেছে। আমি বটবৃক্ষ। সাবধান হয়ে গিয়েছি। সৃঞ্জয় আর আমি ইলেকশনে দাঁড়াব, আর টুবলাই (সৌমিক বোস) বিরোধী থাকবে, এটা হবে না। ফাটল ধরাতে পারবে না। আমার পরিবারে ফাটল ধরানোর আগে আমি বিষ খেয়ে মরে যাব।” টুটুবাবু ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন, এই দেবাশিস দত্তই তাঁর অভিন্নহৃদয় বন্ধু অঞ্জন মিত্রর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার মূল কারণ। ভোটের ময়দানে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে অবশ্য দেবাশিসকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না তিনি। টুটুবাবুর বক্তব্য, “আমার বিগেস্ট স্কিল হল আমার নাম, টুটু বোস। এটা আমার মানসম্মানের প্রশ্ন। টাইগার আভি জিন্দা হ্যায়।”
অতীতে অনেকবার দেখা গিয়েছে, নির্বাচনের আগে শাসক-বিরোধী উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পরও শেষমেশ সরাসরি নির্বাচন হয়নি। সিলেকশন হয়েছে। কিন্তু এবার তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই বলে স্পষ্ট করে দিলেন মোহনবাগানের পদত্যাগী সভাপতি। প্রশাসনিক স্তর থেকেও আর মধ্যস্থতার প্রশ্ন নেই বলে জানিয়ে দিলেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.