শেষ হাসি কার জন্য তোলা থাকবে?
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ঘরের দেওয়ালে যাঁর পোস্টারের দিকে তাকিয়ে এক সময় পেশাদার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ঘুমোতে যেতেন, আজ তাঁর কাঁধে কাঁধ ঠেকিয়ে মাঠে নামবেন। ‘গুরু’ ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর সঙ্গে টস করে কোয়ার্টার ফাইনালের শুরু করবেন ‘শিষ্য’ কিলিয়ান এমবাপে। আবেগের সেই মুহূর্তে অবশ্য দু’জনেরই মাথায় ঘুরবে অন্য কিছু অঙ্ক। এক, নিজেদের দেশকে নিয়ে যেতে হবে শেষ চারের দৌড়ে। দুই, খুলতে হবে চলতি টুর্নামেন্টে (UEFA Euro 2024) গোলের খাতা।
শুক্র মাঝ রাতে হামবুর্গে যখন নামবে ইউরোপের অন্যতম শক্তিধর দুই দল, তখন লড়াইটা যত না দুই দেশের, তার থেকেও যেন অনেক বেশি হতে চলেছে এই দুই মহাতারকার। তার আগে রোনাল্ডোর মাথায় যখন ঘুরছে নিজের শেষ বড় টুর্নামেন্টকে স্মরণীয় করে রাখা, এমবাপের চিন্তা তখন একেবারে মাঠের বাইরের বিষয়। শুধু এমবাপে কেন, ফ্রান্সের জার্সিতে মাঠে নামা প্রত্যেক আফ্রিকাজাত ফুটবলারের শয়নে, স্বপনে দেশে ঘটে চলা নির্বাচন। ম্যাচের আগে তাই দেশবাসীর কাছে আবেদনও করে বসলেন এমবাপে, “আপনারা বেরিয়ে আসুন। ভোট করুন। দক্ষিণপন্থীদের কিছুতেই জিততে দেওয়া যাবে না। তাহলে বিপর্যয় ঘনিয়ে আসবে।” কিন্তু কেন মাঠের বাইরের বিষয়ে এত মাথা ঘামাচ্ছেন এমবাপে? আসলে ফ্রান্সে বর্তমান যা পরিস্থিতি, তাতে মেরিন লে পেনরা ক্ষমতায় এলে ফ্রান্স ছাড়তে হবে অ-ফরাসি কোটি কোটি মানুষকে।
দলীয় সংহতি অটুট রাখতে অবশ্য ফুটবলারদের মাথা থেকে রাজনীতি বার করার পরামর্শ ও নির্দেশ দিচ্ছেন কোচ দিদিয়ের দেশঁ। বক্তব্য, “যে বিষয় আমাদের হাতে নেই, তা নিয়ে ভাবার থেকে নিজেদের কাজ মন দিয়ে করই শ্রেয়।” ফুটবলাররা কী করবেন, তা বোঝা যাবে রেফারির বাঁশি বাজার পর। তবে নিজের কাজ ইতিমধ্যেই শেষ করে ফেলেছেন দেশঁ। কার্ড সমস্যায় পর্তুগালের বিরুদ্ধে খেলতে পারবেন না আদ্রিয়েন র্যাবিয়ট। তাঁর বদলে রিয়াল মাদ্রিদ মিডফিল্ডার এডুয়ার্ডো কামাভিঙ্গাকে খেলানোর সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়ে ফেলেছেন দেশঁ। ফলে ইউসুফ ফোফানাকে থাকতে হবে বেঞ্চেই। সেক্ষেত্রে ফরাসি আক্রমণ ত্রিভুজের মাঝখানে মার্কোস থুরামের জায়গায় চলে আসতে পারেন গ্রিজম্যান। ডানদিকে তাঁর বদলে থুরামকে বসিয়ে খেলাতে পারেন ডেম্বেলেকে। এমবাপে থাকবেন নিজের পছন্দের লেফট উইংয়ে। প্ল্যান বি হিসাবে ত্রিভুজ তৈরি হতে পারে এমবাপে-থুরাম-গ্রিজম্যানকে নিয়ে।
উল্টোদিকে সতীর্থদের রোনাল্ডোর কথা বলে চাগাচ্ছেন পর্তুগিজ কোচ রবার্তো মার্টিনেজ। ফুটবলের যুগাবতারের শেষটা যেন হয় হাসিমুখে, সেই কথা পাখি পড়ানোর মত বলে যাচ্ছেন তিনি। চুপচাপ বসে নেই সিআরও। ড্রেসিংরুমে বলে ফেলেছেন, “চলো, যুদ্ধে নামি। আমি ফুটবলবিশ্ব ছাড়তে চলেছি। মনে রেখো ফুটবল ছেড়ে দেওয়ার পর আমার কাছে এই বিশ্বে আর কিছু কি থাকবে?” রোনাল্ডোর এই ছোট্ট বক্তব্যই ড্রেসিংরুমকে চাগিয়ে দিতে যথেষ্ট।
পর্তুগালকে অবশ্য শুধু রোনাল্ডোর জন্যই নয়। নিজেদের প্রমাণ করার জন্যও খেলতে হবে। শেষ দুই ম্যাচে ২১০ মিনিটে কোনও গোল করতে পারেনি পর্তুগাল। যে দল গ্রুপ শীর্ষে থেকে নক আউটে এসেছে। যারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অন্যতম দাবিদার, তাদের কাছে এই পরিসংখ্যান যে যথেষ্ট লজ্জার, তা বলে দিতে হয় না। একদিকে হাসিমুখে ফুটবলকে বিদায় জানানো। অন্যদিকে টুর্নামমেন্টের পর আদৌ দেশে ফেরা যাবে কিনা সেই চিন্তা। দেখার শুধু শুক্র রাতে শেষ হাসি কারা হাসে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.