রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়, শারজা: দুপুর দেড়টা নাগাদ পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ যখন দুবাইয়ের আইসিসি ক্রিকেট অ্যাকাডেমির মিডিয়া রুমে এসে বসলেন, আন্দাজ করা যায়নি যে এত ভয়াবহ বিস্ফোরণ আর কিছুক্ষণে আসছে! পাক অধিনায়ককে দেখলে মনে হয়, তাড়াহুড়ো করার স্বভাব তাঁর বোধহয় জন্মগত। সরফরাজ কথা বলেন সব সময় গলা চড়িয়ে। তা, প্রাক ভারত ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলনে সরফরাজকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, সরফরাজ ভারত আপনাদের কাছে হারলেও দুবাইয়েই সুপার ফোর ম্যাচ খেলবে। আর আপনারা গ্রুপ শীর্ষে থেকে শেষ করলেও লাভ নেই। যেতে হবে দুবাই থেকে দেড় ঘণ্টা মোটর দূরত্বের আবু ধাবি। একটা নয়, সুপার ফোরের দু’টো ম্যাচ খেলতে হবে ওখানে। এটা কি অবিচার নয় যে, একটা টিম সম্রাটের মতো বসে থাকবে দুবাইয়ে। দুবাইয়েই সব ম্যাচ খেলবে। আর বাদবাকি টিমগুলো নিত্য ছুটোছুটি করবে?
পাক অধিনায়কের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হল, সম্ভবত এই ফুলটস ডেলিভারিটারই অপেক্ষা করছিলেন। এবং প্রশ্নটা শোনামাত্র তেড়েফুঁড়ে সেটাকে বাউন্ডারির বাইরে পাঠাতে নেমে পড়লেন। “ঠিকই তো। দেখুন, দেড় ঘণ্টা ট্র্যাভেল করে আবু ধাবিতে ম্যাচ খেলতে যাওয়া টাফ, খুব টাফ। প্রথমত, এত গরম। তার উপর ঠাসা শিডিউল। একদিন পরপর ম্যাচ। আমার মতে, টুর্নামেন্ট যখন একটাই। তখন প্রত্যেক টিমের জন্য নিয়মও এক হওয়া উচিত,” ঝাঁঝিয়ে ওঠেন সরফরাজ। “আমার বক্তব্য, পাকিস্তান যদি সুপার ফোরের ম্যাচ খেলতে দুবাই থেকে আবু ধাবি ট্র্যাভেল করতে পারে। তা হলে বাকিরা সেটা করবে না কেন? প্রত্যেকটা টিমই আবু ধাবিতে গিয়ে সুপার ফোর খেলুক। জানি না, এশীয় ক্রিকেট কাউন্সিল কী ভেবে এ রকম শিডিউল করেছে।”
রোহিত শর্মাদের চিরশত্রু দেশের অধিনায়কের কথাবার্তা শোনা বা জানা সম্ভব ছিল না। ততক্ষণে তাঁরা হংকং ম্যাচের ওয়ার্ম আপে নেমে পড়েছেন। কিন্তু তাতে কী? ভারত যুদ্ধের চব্বিশ ঘণ্টা আগে পাকিস্তান অধিনায়ক যদি সর্বসমক্ষে এ সব বলে বসেন, ঠোঁট থেকে শব্দের বদলে সরফরাজ যদি ছুঁড়ে দেন গরম বুলেট- জাতীয় বিতর্কের জন্ম হতে খুব সময় লাগে কি? লাগে না। লাগলও না। আবু ধাবি ক্রিকেটের সিইও ম্যাট বাউচারকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন , এতে আমরিশাহি ক্রিকেট কর্তাদের কিছু করার নেই। এ সব শিডিউল ভারতীয় বোর্ড আর এশীয় ক্রিকেট কাউন্সিল মিলে করেছে। এটা অনস্বীকার্য যে, ভারত আদতে টুর্নামেন্ট সংগঠন না করেও সংগঠকের সুযোগ-সুবিধে পুরোপুরি নিচ্ছে। এবারের এশিয়া কাপ ভারতেই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারতে না হয়ে সেটা শেষ পর্যন্ত আমিরশাহিতে শিফট হয়। কিন্তু তাই বলে ভারত যে সংগঠকের সুবিধে ছেড়েছে, মনে করার কারণ নেই। রোহিত শর্মারা আলাদা হোটেলে থাকছেন। বাকি টিমের সঙ্গে এক হোটেলে নয়। পরে ভারত এটাও জানিয়ে দেয় যে, তারা সুপার ফোরে নানা জায়গায় খেলতে যাবে না। সব ম্যাচ দুবাইয়েই খেলবে।
সরফরাজের অভিযোগ নিয়ে কোনও কোনও বোর্ড কর্তাকে দেখা গেল, বেশ তেতে গিয়েছেন। এঁরা উষ্মা দেখিয়ে বলছেন যে, আবু ধাবির চেয়ে দুবাই ক্রিকেট স্টেডিয়ামে লোক ধরে বেশি। টুর্নামেন্টে টিকিট বিক্রি থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ পাবে ভারতীয় বোর্ড। সেটা কেন ছাড়বে? এশিয়া কাপের টিভি রাইটসের টাকা বোর্ড পাবে না। পাবে এশীয় ক্রিকেট কাউন্সিল। এরপর গেট সেলসের টাকাও ছেড়ে দিলে বোর্ডের হাতে কী থাকবে? সেখান থেকেও একটা অংশ এসিসিকে দিতে হবে। পাকিস্তান গরম গরম কথা বলতে পারে। কিন্তু তাদের মনে রাখা উচিত, ভারত শুধু পাকিস্তানের কথা ভেবেই দুবাইয়ে টুর্নামেন্ট খেলতে রাজি হয়েছে। ঘুরেফরে কী দাঁড়াল? শিরোনাম কী দাঁড়াল? সহজ তো-প্রথম বল পড়ার আগেই শুরু ভারত বনাম পাকিস্তান! ব্যাট-বল নয়। সূচি নিয়ে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.