সুব্রত বিশ্বাস: তিন দশকেরও বেশি সময় আগে প্রায় বিদায় নেওয়া লুডো আবার ফিরে এল করোনার হাত ধরে। লাল, নীল, সবুজ, হলুদ ঘুঁটির কাটাকাটির খেলা এক সময় জনপ্রিয় ছিল। নয়ের দশকে এসে প্রায় বিদায় নেয় এই খেলা। বিদায় নেওয়ার মূল কারণ, এই প্রজন্মের হাতে তখন এসে গিয়েছে ভিডিও গেমের কি-বোর্ড। আজ ভিডিও গেমও অতীত। এখন মোবাইলের অনলাইনে এসে গেছে বহু জনপ্রিয় খেলা। পাবজির নেশায় বুঁদ তরুণ প্রজন্ম। কিন্তু লকডাউনে সব খেলাকে ছাপিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সেই মান্ধতার আমলের লুডোই। ঘরবন্দি দশায় এখন আট থেকে আশি সবাই খেলছে লুডো। চিত্র পরিচালক হারানাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘টালিগঞ্জের বেশ কয়েকটি দোকানে লুডো বোর্ডের জন্য খোঁজ করে ছিলাম। কিন্তু চাহিদা তুঙ্গে থাকায় ফুরিয়ে গিয়েছে বলে জানান দোকানদার।’
কাগজ বা প্লাস্টিকের বোর্ডের লুডো খেলার মজাই আলাদা। তবে লকডাউনে গৃহবন্দি অনেকেই সেই বোর্ডের উপর ভরসা করছেন না। অনলাইনেই মোবাইল গেমটি খেলছেন তাঁরা। মোবাইলে একসঙ্গে বসে যেমন খেলা যায়, তেমনি সুদর ইউক্রেন থেকে মুম্বাইতে বসবাসকারী বাবা-মার সঙ্গে লুডো খেলছেন মেডিক্যাল ছাত্রী তিতলি বিশ্বাস। বাবা মহালক্ষ্মী রেল স্টেশন-এর সুপার প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, ‘ছোট বেলায় এই খেলা জনপ্রিয় ছিল। এখান মানুষের হাতে সময় কম, তাই আর চল নেই। তবে এই লকডাউন সময় কাটানোর মোক্ষম মাধ্যম হয়েছে এটি।’
লুডো খেলা জনপ্রিয় হওয়ার মূল কারণ, এতে বয়সের দরকার হয় না। সবাই খেলতে পারেন। সবাই একই আনন্দ উপভোগ করে এক সঙ্গে। মনোবিদ দোলা মজুমদার বলেন, ঘুটি কাটাকাটির বিষয়টা মানসিক আনন্দ দেয়। সময় কাটানোর জন্য এটি একটি ভালো খেলা। শুধু বাঙালি নয়, অবাঙালিদের কাছে সমান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই খেলা। হাওড়ার ব্যবসায়ী ডি বি মেশিন টুলসের কর্ণধার বিনোদকুমার জয়সওয়াল ‘জব এক্টিভিটিস’ না থাকায় এটাকে ‘মোস্ট এসেনশিয়াল’ মনে করেছেন। ভাল সময় কাটছে খেলে। সত্তর-আশির দশকে দুপুরে ঘরের মা, বোনেরা সময় কাটাতেন লুডো খেলেই। হারানাথ চক্রবর্তীর কথায়, ‘এক সময় মেয়েদের সময় কাটানোর জন্য এই খেলা অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। এখন মেয়েরাও কাজে বেরোচ্ছেন। ফলে লুডো তার জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। এখন লকডাউন মানুষকে অস্থায়ী ভাবে কর্মহীন করে ফেলেছে। তাই আবার লুডো নিজের জনপ্রিয়তা ফিরে পেয়েছে।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.