শিলাজিৎ সরকার: প্রতি সেকেন্ডে বাড়ছিল অপেক্ষা। বিমানবন্দরের বাইরে তখন দেউলপুর থেকে আসা কয়েকশো মানুষ। কারও হাতে জাতীয় পতাকা, কারও হাতে অচিন্ত্য শিউলির ছবি। টানা বেজে চলেছে ঢোল-তাসা। এরমধ্যেই বাইরে এল চেনা চেহারা। কমনওয়েলথ গেমসে (Commonwealth Games) ৭৩ কেজি বিভাগে সোনা জিতে বাংলার মাটিতে পা রাখলেন ভারোত্তোলক অচিন্ত্য শিউলি (Achinta Sheuli)।
ঘরের ছেলেকে আগলে নিয়ে এলেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি, আইএফএ সভাপতি অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়, বিওএ সভাপতি স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়রা। সঙ্গে দাদা অলোক শিউলি, কোচ অষ্টম দাসরা। বিমানবন্দরের বাইরে আসতে অচিন্ত্যর নামে জয়ধ্বনি দেওয়া শুরু। যা দেখে আপ্লুত অচিন্ত্য বললেন, “এই মুহূর্তটা খুব আনন্দের। এত ভালোবাসা পাব ভাবতে পারিনি।”
অভাবের সংসারে ভারোত্তোলক হওয়া সহজ ছিল না। তাঁর উপর বাবার মৃত্যু পরিবারের চাপ বাড়িয়ে দিয়েছিল। তবে অচিন্ত্যর পথের বাধা যতটা সম্ভব দূর করেছেন মা পূর্ণিমা শিউলি আর দাদা অলোক শিউলি। সোনা জেতার আটদিন পর বাড়ি ফিরে তাঁদের কথাই শোনা গেল অচিন্ত্যর মুখে। আপাতত সপ্তাহ দুয়েক বাড়িতে ছুটি কাটাবেন। তার মধ্যেই স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডাকে দিল্লি যাবেন। সেখানে থেকে আবার বাড়ি ফিরবেন।
গ্রামে ফিরতেই ফের উৎসব। প্রায় মাঝরাতেও রাস্তায় দাঁড়িয়ে গোটা গ্রাম। বাড়ি ঢোকার আগে সোজা কোচ অষ্টম দাসের আখড়ায় গেলেন। গ্রামের মন্দিরে প্রণাম সেরে বাড়িতে। সেখানে চোখে জল নিয়ে দাঁড়িয়ে মা পূর্ণিমা শিউলি। সোনার ছেলেকে জড়িয়ে ধরতে আবেগের বাঁধ ভাঙল তাঁর। এদিকে, বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে অচিন্ত্যর পাশে থাকার বার্তা দিলেন অরূপ বিশ্বাস। তিনি বলেন, “অচিন্ত্য বিশ্বের দরবারে একজন বাঙালি হিসাবে শুধু বাংলারই নয়, ভারতেরও মুখ উজ্জ্বল করেছে। আমরা অচিন্ত্যর পাশে আছি। অলিম্পিকের প্রস্তুতির জন্য ওকে সবরকম সাহায্য করব।’’
অচিন্ত্যর দাদা অলোককে ক্রীড়া দপ্তরে স্থায়ী চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি। সরকারি সাহায্য পেলে ভালভাবে অলিম্পিকের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবেন, জানান অচিন্ত্য। আপাতত আরও বেশি ওজন তুলতে চান সোনাজয়ী। অলিম্পককেই পাখির চোখ করে এগোবেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.