সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: টোকিও অলিম্পিক কী শেষ পর্যন্ত স্থগিত হয়ে যাবে? নাকি কিছুদিন পিছিয়ে যেতে পারে? এই প্রশ্নই এখন উঠে গিয়েছে গোটা আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে। যেহেতু অলিম্পিক বাদে মোটামুটি বড় ইভেন্টের খেলাগুলো সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যদিও প্রশ্ন ওঠার কারণ একটাই, স্বয়ং আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট থমাস বাচ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, টোকিও অলিম্পিক সাময়িক বন্ধ করার ব্যাপারে সত্যি তাঁরা গঠনমূলক চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন।
সারা বিশ্ব জুড়ে এখন অলিম্পিক নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে। বিশেষ করে ইউরো কাপ থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছিল, তাহলে অলিম্পিক যথাসময়ে হওয়ার কারণ কি? বিশেষ করে অ্যাথলিটরা যখন গৃহবন্দি। কেউ তেমন প্র্যাকটিস করতে পারছে না। যোগ্যতামানের টুর্নামেন্টগুলো ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে। তখন কিসের ভিত্তিতে ২৪ জুলাই অলিম্পিক শুরুর কথা ভাবছে আইওসি(IOC)? বৃহস্পতিবার আইওসির প্রেসিডেন্ট থমাস বাচ জানিয়েছেন, ‘ব্যাপারটা নিয়ে আমরা আলাদা করে ভাবতে শুরু করেছি। আসলে প্রচুর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সারা বিশ্বের প্রায় ২২০ জন অ্যাথলিটের প্রতিনিধিরা আমাকে ফোন করেছিলেন। প্রত্যেক তাঁদের সমস্যার কথা জানিয়েছেন। তাঁরা যা যা বলেছেন তারমধ্যে সত্যতা লুকিয়ে আছে। এসব তো মানতেই হবে।’
শুধু এইটুকু বলে থামেননি, আইওসির প্রেসিডেন্ট আরও বলেছেন, ‘আমাদের সদাসর্বদা লক্ষ্য থাকবে গঠনমূলক চিন্তাভাবনা করা। সঠিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাস্তবকে তুলে ধরা। তবে একটা কথা মানতেই হবে, আমাদের কাছে অ্যাথলিটরা হল আসল। তাদের কথা আগে মানতে হবে। আমাদের কাছে আসল হল দু’টো দিক। এক, অ্যাথলিটদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়টাকে আগে দেখা। যাতে কেউ ভাইরাসে আক্রান্ত না হয়। দুই, অলিম্পিকে অ্যাথলিটদের সুরক্ষায় রাখা।’
এদিকে বাচের এই বক্তব্য শুনে বেজায় চটেছেন চারবার অলিম্পিকে রোয়িংয়ে সোনা পাওয়া ব্রিটিশ অ্যাথলিট ম্যাথিউ পিনসেন্ট। তাঁর সাফ কথা, ‘বাচ আপনার কথা আমাকে অবাক করেছে। অ্যাথলিটরা ঠিকমতো ট্রেনিং করতে পারছেন না। কোথাও যেতে পারছেন না। অ্যাথলিট থেকে শুরু করে দর্শক এমনকী অর্গানাইজাররা চাইছেন না অলিম্পিক হোক। তাহলে আপনি কিসের ভিত্তিতে অলিম্পিক যথাসময়ে করার ব্যাপারে গোঁ ধরে বসে আছেন?’
সম্প্রতি আইওসির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘আমরা প্রকৃত সমাধানের রাস্তা খুঁজে পাচ্ছি না।’ বিশ্ব হেপ্টাথেলনে চ্যাম্পিয়ন জনসন থমসন ফ্রান্সে কিছুদিন ট্রেনিং সেরে ফিরে এসেছেন গ্রেট ব্রিটেনে। তিনি প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন, অ্যাথলিটরা কোন পথে হাঁটবে? একদিকে আইওসি বলছে, তোমরা অলিম্পিকের জন্য প্রস্তুতি নাও। নিজেদের সেরাটা তুলে ধরার চেষ্টা কর। অথচ আমাদের সরকার জানিয়ে দিয়েছে, পুরোপুরি বাড়িতে থাকতে হবে। ট্র্যাক থেকে জিম সবকিছু বন্ধ। তাহলে আমরা যাব কোথায়? এবার আইওসি ফাঁপরে পড়তে বাধ্য।
কিন্তু, টোকিও অলিম্পিকের সংগঠকরা গোঁ ধরে বসে আছেন। যথাসময়ে অলিম্পিক করাই তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য। সারা বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসে মানুষ আতঙ্কিত। প্রায় ৯০টি দেশের মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গিয়েছেন প্রায় ৮৩০০ মানুষ। অথচ জাপান চাইছে টোকিও অলিম্পিক বন্ধ না করতে। কিন্তু, ইতিমধ্যে ইউরো কাপ, কোপা আমেরিকা থেকে শুরু করে ফরাসি ওপেন সবই যথাসময়ে হচ্ছে না। কোনও টুর্নামেন্ট চার মাস পিছিয়েছে। আবার কোনওটা বা পিছিয়েছে প্রায় এক বছর। তবে আইওসি প্রেসিডেন্ট থমাস বাচ যা ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাতে ধরে নেওয়া যায়, যথাসময়ে অলিম্পিক হওয়া নিয়ে সামান্য হলেও সংশয় রয়েছে। এখন দেখার বিষয় শেষপর্যন্ত অলিম্পিক সংগঠকদের পথ নির্দেশ মেনে চলে নাকি আইওসির ইচ্ছে গুরুত্ব পায়। তবে যাই হোক না কেন, অলিম্পিক যথাসময়ে হওয়া নিয়ে বিতর্ক কিন্তু তুঙ্গে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.