নন্দন দত্ত, সিউড়ি: অনুলেখক বা ‘রাইটার’জোগাড় করতে দু’বছর লেগে গেল রশিদার। তবু হাল ছাড়েনি জন্মান্ধ মেয়েটি। দু’বছর পর এবার রাইটার নিয়ে আজ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে রশিদা খাতুন।
[চিন ও পাকিস্তানকে ঠেকাতে এবার একযোগে আসরে ভারতীয় রেল ও সেনা]
রশিদা খাতুন। বাড়ি বীরভূমের মাড়গ্রাম থানার বাগান পাড়ায়। বাড়িতে তিন বোন, এক ভাই। ছোট থাকতেই মারা গিয়েছেন মা। বাবা বাজারে সবজি বিক্রি করে সংসার চালান। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। বাড়িতে দুই বোন অন্ধ। ভাই বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। বাড়ির ছোট বলতে রসিদা। ছোট থেকেই পড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল তার। গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ভর্তি হয়েছিল মাড়গ্রাম হাই মাদ্রাসায়। সেখানেই নিয়মিত স্কুলে গিয়ে মন দিয়ে শিক্ষকদের পড়ানো মনোযোগ দিয়ে শুনত। সময় পেলেই সহপাঠীদের ডেকে বিভিন্ন বিষয় পাঠ করিয়ে শুনে শুনে নিজেকে মেধাবী তৈরি করে ফেলেছিল। তাই ক্লাস পরীক্ষা না দিয়েই শুধুমাত্র খাতায় নাম লিখেই তাকে দশম ক্লাস পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিলেন শিক্ষকরাই। গতবার তার মাধ্যমিকে বসার কথা ছিল। সেই মতো ‘রাইটার’ চেয়েছিল। কিন্তু একজন রাইটার জোটেনি। জোগাড় করে দিতে পারেননি শিক্ষকরা। তাই পরীক্ষায় দেওয়া হয়নি তার।
সে সময় প্রধান শিক্ষক গোলাম মহম্মদ জানিয়েছিলেন নবম শ্রেণির কোনও ছাত্র তার রাইটার হতে চায়নি। এ বছর এগিয়ে আসে বীরভূম জার্নালিস্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। রশিদার রাইটারের খোঁজে সাংবাদিকরা দ্বারস্থ হন রামপুরহাট মহকুমা শাসকের। সরাসরি হস্তক্ষেপ করেন মহকুমা শাসক সুপ্রিয় দাশ। তাঁর চেষ্টাতেই এবার মাধ্যমিকে বসতে চলেছে রশিদা।
মহকুমা শাসক সুপ্রিয় দাশ বলেন, “এই ঘটনা স্কুল কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত গাফিলতি। তাঁদের আরও মানবিক হওয়া উচিত ছিল। এবার রশিদা পরীক্ষায় বসতে পারবে। ভাল ফল করতে পারলে পরিশ্রম সার্থক হবে।” স্বপ্নপূরণের কাছাকাছি এসে পরীক্ষায় বসার আগে রশিদা জানায়, “এবার আমাকে একজন নবম শ্রেণির ছাত্রী দেওয়া হয়েছে। আমার বিশ্বাস আমি ভাল ফল করবই। গত দু’বছর ধরে সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
[নজিরবিহীন নজরদারিতে আজ থেকে শুরু মাধ্যমিক]
ছবি : সুশান্ত পাল
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.