ধীমান রায়, কাটোয়া: আজও জলঘড়ির সময় মেনে কাটোয়ার দোনা গ্রামে ভট্টাচার্য বাড়ির জোড়া দুর্গার পুজো হয়। পরিবারের দাবি, তাদের পুজো প্রায় চারশো বছরের পুরনো। একই মন্দিরে পাশাপাশি দু’টি প্রতিমা রেখে পুজো করাই প্রথা ভট্টাচার্য বাড়ির। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দোনা গ্রাম ও তার আশপাশের এলাকা একসময় ছিল জঙ্গলাকীর্ণ। ভট্টাচার্য পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল কাটোয়ার করুই গ্রামে। পূর্বপুরুষ রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য ছিলেন একজন সাধক। তিনি রোজ করুই থেকে দোনার জঙ্গলে সাধনা করতে আসতেন। তারপর নিরিবিলি জায়গা হিসাবেই এই এলাকাকে পছন্দ হয়ে যায়। পাকাপাকিভাবে দোনাতেই বসবাস শুরু করেন।
বসতবাড়ির পাশে একটি বেলগাছের তলায় শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রামকৃষ্ণ। ভৈরবনাথ রূপে আজও তা পূজিত হয়। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, একদিন রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্যর স্বপ্নাদেশ পান মহাদেবের সঙ্গে দেবী দুর্গারও পুজো করতে হবে। সেই থেকে তিনি দোনা গ্রামে দুর্গাপুজো শুরু করেন। তবে শুরুতে ভট্টাচার্য পরিবারে একটি প্রতিমারই পুজো হত। জানা গিয়েছে, তিনপুরুষ পর থেকে জোড়া প্রতিমার পুজো শুরু হয়। সেই সময় পরিবারের দুই ভাই জয়রাম ও হরিরাম ভট্টাচার্যর মধ্যে মনোমালিন্যে দু’জনেই পৃথক প্রতিমার পুজো শুরু করেন। তবে পরবর্তীকালে দেবীর স্বপ্নাদেশে তাঁরা জোড়ামূর্তি পাশাপাশি রেখেই পুজো শুরু করেন। সেই থেকে আজও দোনা গ্রামে একই ছাদের নিচে জোড়া দুর্গার পুজো চলে আসছে।
শাক্তমতে পুজো হয় ভট্টাচার্য পরিবারে। সুরা বা মদ ছাড়া পুজো হয় না। জোড়া দুর্গার উদ্দেশ্যে জোড়া মহিষ বলিদান দেওয়া হয়। করুই গ্রাম থেকে বাঁকে চাপিয়ে পুজোর জন্য আনা হয় সুরা। নিয়ম আছে, সন্ধিপুজোয় ভট্টাচার্যবাড়িতে বলিদানের পর এলাকার অন্যান্য পুজোর বলিদান হয়। ভট্টাচার্য বাড়িতে পুজোর সময় দেখা হয় জলঘড়িতে। একটি বড় পাত্রে জল নেওয়া হয়। তারপর ওই জলের উপর বসানো হয় দু’টি পৃথক মাপের বাটি। বাটি দু’টির তলায় ছিদ্র থাকে। সে ছিদ্রে জল প্রবেশ করে ধীরে ধীরে বাটি দু’টি ডুবতে থাকে। ছোট বাটিটি ডুবতে ১৮ মিনিট সময় নেয়। বড় বাটিটি ডুবতে সময় লাগে ২৪ মিনিট। এভাবে একবার ডুবলে এক ‘কাত’ এককে হিসাব রাখা হয়। সেই কাতের হিসাবে পুজো শুরু বা শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয়।
ছবি : জয়ন্ত দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.