দেবব্রত মণ্ডল: কালের নিয়মে পরিবর্তন হয়েছে মানুষের ব্যবহার্য বিভিন্ন দ্রব্য-সামগ্রী। বাড়ির ল্যান্ড ফোন থেকে রেডিও,বেশ কিছু জিনিস এখন প্রায় চলে এসেছে ইতিহাসের পাতায়, তাই তো! অনলাইন রেডিওর যুগেও গ্রাম বাংলার মানুষের এখনও সঙ্গী সেই অফ লাইন রেডিও। তাই শুধু মহালয়া নয় সারা বছরই রেডিওর বিভিন্ন অনুষ্ঠান নিত্যসঙ্গী এইসব মানুষগুলোর কাছে। বিশেষ করে সুন্দরবনের দ্বীপে, নদীতে ও সাগরে চলাচলকারী মানুষগুলোর জন্য রেডিওর কদর অনেক বেশি। তবে শহরের ক্ষেত্রে চিত্রটা একটু আলাদা। রেডিও মানেই তাঁদের কাছে এফএম শোনা। তাই তাদের কাছে মহালয়ার প্রাক্কালে বেশ বেড়েছে রেডিওর কদর ।
শারদ উৎসব আসন্ন, আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চন্ডী পাঠের সঙ্গে সঙ্গে সূচনা হবে দেবীপক্ষের। আর এই দেবীপক্ষের সূচনা ভোররাতে বীরেন্দ্র কৃষ্ণের বিখ্যাত কন্ঠে মহালয়া আজও পৌঁছে যায় গ্রামের মানুষদের কাছে। তবে বহু মানুষ অন্যান্য সময় বিভিন্ন বিনোদনমূলক বৈদ্যুতিন সামগ্রীর উপর ভরসা করে থাকলেও এই মহালয়ার দিনটি কিন্তু রেডিওতেই উপভোগ করেন। নতুন ব্যাটারি ভরে রেডিওকে ঠিক করে প্রস্তুত রাখেন বাড়িতে। অর্থাৎ মহালয়ার জন্য রেডিওর বছরের ওই একটা সময়েই কদর বাড়ে বেশি। এ বিষয়ে ইলেকট্রনিক্স দ্রব্য বিক্রিতা নরেশ দাস বলেন, বয়স্ক লোকজনের মধ্যে এখনও রেডিওর চাহিদা যথেষ্ট আছে। মোবাইলে যুগেও তারা রেডিওর খোঁজ করেন।
শুধু পুরনো রেডিও নয় মহালয়া উপলক্ষে নতুন রেডিওর বিক্রিও বেড়েছে এই কয়েকদিনে। ইদানিং কালে বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের সঙ্গে বেনামি কোম্পানির রেডিও থাকছে মার্কেটে। প্রতিদিন প্রায় দু-তিনটে করে রেডিও বিক্রি হচ্ছে দোকানগুলিতে। আর পুরনো রেডিও থাকলে সেগুলি সারাইয়ের ধুম পড়ে গিয়েছে। কারণ রাত পোহালেই তো মহালয়া। বেজে উঠবে, “আশ্বিনের শারদপ্রাতে…।”
রেডিও হল তারবিহীন বেতার যন্ত্র। যে যন্ত্রের ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে আমরা দূরের কোনও স্টেশন থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও নাচ-গান শুনতে পাই। ১৮৯৮ সালে ২৪ বছর বয়সে ইতালিয়ান তরুণ বিজ্ঞানী মার্কনী বিশ্বে প্রথম রেডিও আবিষ্কার করেন। আর তার কয়েক বছর পর আমেরিকার সর্বপ্রথম রেডিওর সম্প্রচার শুরু হয়। তবে রেডিও আবিষ্কারের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছিলেন জগদীশচন্দ্র বসু। ১৮৯৪ সালে জগদীশচন্দ্র বসু প্রথমেই বিনা তারে বার্তা প্রেরণ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। ভারতবর্ষে ১৯৩৬ সালে প্রথম রেডিও কার্যক্রম শুরু হয় সরকারি ভাবে।
তবে বর্তমান যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর আবিষ্কার হল অনলাইন রেডিও। অনলাইন রেডিও তে একটি ওয়েবের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ হয় সব। বর্তমানে এখনও ডিজিটাল রেডিও নয় এখনও গ্রামের মানুষের ভরসা সেই মান্ধাতার আমলের এএম রেডিও। গ্রামের মানুষরা এ বিষয়ে জানান, বহু জায়গায় এখনও পৌঁছায়নি ইন্টারনেট। আজ গ্রামে যে সমস্ত এলাকায় ইন্টারনেট ব্যবস্থা আছে তাও খুবই দুর্বল। আকাশবাণীই ভরসা। তাই অবসরে বিনোদনের জন্য ভরসা রেডিওই। তাই শুধু মহালয়া নয় সারা বছরই রেডিও শোনা যায় এইসব এলাকাতে। পল্লীগীতি, লোকগীতি, নাটক,যাত্রা সবাই এই রেডিওর মাধ্যমে পৌছে যায় সেসব মানুষের কাছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.