নন্দন দত্ত, সিউড়ি: মুসলিম গ্রামে দুর্গাপুজো। সেই মোঘল আমল থেকে এভাবেই বেনে বাড়িতে দুর্গা পুজো হয়ে আসছে। রামপুরহাটের বনহাটের এই পুজো এক অন্যরকমের ঐতিহ্যবাহী।
গ্রামবাসীদের কাছে এটা প্রায় ধ্রুব সত্যের মতো হয়ে গিয়েছে যে, গ্রামে থেকেও মায়ের মুখ না দেখলে সারা বছর খারাপ যাবে। তাই এ পুজো যতটা ধর্মীয় তার থেকে অনেক বেশি বিশ্বাসের। হিন্দু-মুসলমান সকলের প্রাণের মা। রামপুরহাট থেকে দুমকার পথ। সেই পথে রাস্তার ধারে জঙ্গলে ঘেরা একটি গ্রাম। বনহাট। যে গ্রামে ৩৫ ঘর হিন্দু। বাকি সকলে সংখ্যালঘু মানুষের বাস। সেই গ্রামে সাড়ম্বরে পুজো হয় দশভুজার। পুজো শুরুর ইতিহাস সকলের কাছে অজানা ছিল। কিন্তু বছর ১৫ আগে মন্দির পরিষ্কারের সময় প্রাচীন পুঁথি পড়ে পরিবারের সদস্যদের হাতে। তা থেকেই জানা যায় এই দুর্গাপুজোর ইতিহাস।
১১৮৯ সালে বাংলাদেশ থেকে আসা রাজারা ধর্মদাস চৌধুরীর নিষ্ঠা দেখে প্রশাংসাপত্র দিয়েছিলেন। মোঘল যুগ। ফলে, পুঁথির হিসাবে রামপুরহাট মহকুমার সবচেয়ে প্রাচীন পুজো এই বেনেবাড়ির পুজো। তবে পুঁথির সব শব্দ এখনও উদ্ধার করতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা। তবে যতটুকু জেনেছিলেন, জমির খাজনা থেকে পুজোর আয়োজন হত। তখনও ছিল জাঁকজমকের পুজো। পরিবারের পরবর্তী সদস্য মুকুন্দ দাস চৌধুরী পরে পুজোর দায়িত্বভার নিজের কাঁধে নেন। সেই ধারাবাহিকতায় রামরঞ্জন, উমাশঙ্কর এবং বর্তমানে কিষানলাল দাস চৌধুরী পুজোর দায়িত্ব আসছেন।
প্রবীণ সদস্য কিষানলাল বলেন, “যেহেতু আমাদের বংশে সকলের একটি করে পুত্র সন্তান, তাই আমাদের পুজো শরিকি ভাগে ভাগ হয়নি। রীতি মেনে একেবারে শুদ্ধ বৈষ্ণব মতে পুজো হয়। এই পুজো আমাদের কাছে ভক্তির এবং বিশ্বাসের। মূর্তি যেমনই হোক, বেদিতে অধিষ্ঠানের পর মা যেন স্বরূপ ধারণ করেন। মা তখন আর মৃন্ময়ী মূর্তি থাকেন না। সাক্ষাৎ জগজ্জননী।” পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বেনেবাড়ির পুজো হলেও ঘট ভরতে দোলা কাঁধে যান ব্রাহ্মনেরা। ঘট আনা থেকে প্রতিমা নিরঞ্জন, সবেতেই শোভাযাত্রায় গ্রামের মুসলিমরা অংশ নেয়। কিষানলালবাবুর দাবি অষ্টমীর দিন অনেক মুসলমান মনস্কামনা পূরণের জন্য উপোস রাখে। পরিবারের ছোট ছেলে অমিত দাস বলেন, রামপুরহাট থেকে আমাদের পুজো ৬ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু এর প্রভাব এতটা ছড়িয়েছে যেখানে বহু দূর থেকে মানুষ আসে এই পুজো দেখতে। তাতে পুজোয় জৌলুস না থাক। ভক্তির টানেই হাজির হয় ভক্তরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.