সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: দুর্গতিনাশিনী নয়, দুর্গার অধিষ্ঠান এখানে একেবারে মাতৃরূপেণ সংস্থিতা। মহাদেবকে সঙ্গী করে উমার কোলে থাকে গণেশ শিশু। তাই দেবী এখানে ‘গণেশ জননী’ হিসাবেই পুজো পান। প্রায় তিনশ বছরেরও বেশি সময় ধরে পুরুলিয়ার কাশীপুরের পঞ্চকোট রাজপরিবারের রাজকর্মচারীর বাড়িতে এভাবেই পূজিতা হয়ে আসছেন মনিহারাতে। এখানে দেবী দুর্গা গণেশ ‘গণেশ জননী’ নামে খ্যাত। এবার এই পুজোর দুর্গা মন্দিরকেও নবরূপে সাজিয়ে তুলছে ওই রাজকর্মচারীর পরিবার।
কাশীপুরের ছোট্ট জনপদ মনিহারা। বাঁকুড়া লাগোয়া এই গ্রামে শুধুমাত্র এই ‘গণেশ জননী’র পুজোটিই হয়ে থাকে। পঞ্চকোট রাজপরিবারের রাজকর্মচারী ছিলেন অকিঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পৌত্র ও তাঁদের তৎকালীন গুরুদেব যোগেন্দ্র ভট্টাচার্য মা দুর্গার কাছে কাশী যাওয়ার স্বপ্নাদেশ পান। তারপরই তাঁরা কাশী গিয়ে ওই ‘গণেশ জননী’র দেখা পেলে এই গাঁয়ে ওই পুজো শুরু করেন। এখানে গণেশ কোলে নিয়ে থাকা পার্বতীর পাশেই শিবের অধিষ্ঠান। শিবের পাশে নন্দী। অন্যদিকে, পার্বতীর পাশে থাকেন জয়া।
তবে এই মাতৃপ্রতিমা থাকলেও গণেশ জননীর পাশের বেদিতে ঘট ও পটে আঁকা দুর্গাপুজো হয়। তবে এই পুজো ‘গণেশ জননী’রও আগের। বলা যায় ওই রাজকর্মচারী পরিবারের এটাই আদি দুর্গা পুজো। ওই পরিবারের সদস্য আনন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “এই গণেশ জননী আমাদের গ্রাম মনিহারা ও কাশী ছাড়া আর কোথাও নেই। এখনও ঐতিহ্য মেনে এই পুজো আমরা করে আসছি।”
এই পুজো পঞ্চকোট রাজপরিবারের রাজকর্মচারীর হলেও ‘গণেশ জননী’র আরাধনায় শামিল হন বিস্তীর্ণ মনিহারা-সহ আশপাশের গ্রামের মানুষজন। আসলে এই রাজকর্মচারীর পরিবারের সঙ্গে মনিহারা গ্রামের সম্পর্ক আজও নিবিড়। এই গ্রামের পত্তন, নামকরণ, সমৃদ্ধ সবকিছুই পঞ্চকোট রাজবংশকে ঘিরে।
এই গ্রামেরই পত্তন করেছিলেন অকিঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই এই পুজোর সমস্ত খরচ আসে দেবোত্তর সম্পত্তি থেকে। পঞ্চকোট রাজপরিবারের সঙ্গে এই পুজো যু্ক্ত থাকায় এই পুজোর আয়োজক রাজসিক। এই পুজোয় একসময় পঞ্চকোট রাজপরিবারের তোপ দেগে সন্ধিক্ষণ ঘোষণা করা হত। এখন অবশ্য ‘তামি’–র সাহায্যে সন্ধিক্ষন নির্ধারিত হয়। একটি মাটির জল ভরা পাত্রে ছিদ্র যুক্ত তামার বাটি ভাসিয়ে দেওয়া হয়। সেই বাটি জল ভর্তি হয়ে ডুবে গেলেই ক্ষণ নির্ধারিত হয়ে থাকে। আগে এই পুজোয় শিবের গান, ছাগল বলি ও বিজয়ার পর লাঠি খেলা হত।এখন তা না হলেও সাবেকিয়ানা ভর করেই এই পরিবারের দুর্গাপুজো হয়ে আসছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.