পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির Sangbadpratidin.in৷ আজ রইল পাঁচথুপির পুরাতন বাটির ঘোষ হাজরা ও ঘোষ রায় পরিবারের দুর্গাপুজোর কথা।
চন্দ্রজিৎ মজুমদার, কান্দি: পাঁচথুপির পুরাতন বাটির ঘোষ হাজরা ও ঘোষ রায় পরিবারের দুর্গা পুজোর বয়স প্রায় ৫০০ বছর। মুর্শিদাবাদ জেলার পারিবারিক পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম এই পাঁচথুপি পুরাতন বাটির দুর্গাপুজো। মুর্শিদাবাদের কান্দির কায়স্থদের আদিপুরুষ রাজা নরপতির উত্তরপুরুষ সন্তোষ ঘোষ। তিনিই সর্বপ্রথম পাঁচথুপির পুরাতন বাটিতে জনার্দন মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী বংশধর জগন্নাথ ঘোষ নবরত্ন মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ওই জনার্দন মন্দির লাগোয়া চণ্ডীমণ্ডপে তখন থেকেই মহাসমারোহে মা দু্র্গার আরাধনা চলে আসছে। শাক্তমতে পঞ্জিকা মেনে ষোড়শোপচারে দুর্গার আরাধনা হয়ে আসছে। এবারও মহিষাসুরমর্দিনী লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ ও বাহন সিংহকে ডাকের সাজে সুসজ্জিত করার কাজ চলছে। গোটা প্রক্রিয়াটিকে সুসম্পন্ন করার কাজে পরিবারের সদস্যরা এখন খুবই ব্যস্ত।
পুরাতন বাটির পরিবারের সদস্য সন্তোষকুমার ঘোষ হাজরার কথায়, ‘বংশের বর্তমান সদস্যরা আদিপুরুষদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য মেনে আন্তরিকতার সঙ্গেই পুজোর কাজ করেন। আমন্ত্রণ ও অধিবাস, আরতি, বলি, পুষ্পাঞ্জলি, হোম, যজ্ঞ, সবেতেই পুরনোকে অনুসরণ করা হয়।”
মহাসপ্তমীর দান সম্পন্ন হলে রীতি মেনে দুই বাড়ির বাজনা একসঙ্গেই গ্রাম পরিক্রমায় যায়। দশমীর সন্ধ্যায় মায়ের বিদায় লগ্নেও দুই বাড়ির দুর্গা প্রতিমা নিয়ে গ্রামে শোভাযাত্রা হয়। নিরঞ্জনও হয় একসঙ্গে। আজও একসঙ্গে গ্রামদেবীর পুজো মণ্ডপে মণ্ডপে সেই প্রথা চলে আসছে। সন্তোষ ঘোষ হাজরার কথায় পুরাতনবাটির সদস্যরা দেবীর পুজোর সাবেকি রীতি বজায় রাখার পাশাপাশি প্রশাসনিক নির্দেশ পালন করতে সব সময় সচেতন।
উল্লেখ্য, যুগ যুগ ধরে পুরাতন বাটির বংশধররা পাঁচথুপিতে উমা মায়ের আরাধনার বন্দোবস্ত করে এসেছেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ভারতীভর ঘোষ। তিনি সিংহবাহিনীর বাড়ি ও পাড়ায় দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। সেই থেকে আজও ঘোষ হাজরা ও ঘোষ রায় বাড়ির সদস্যরা পুরাতন বাটিকে স্মরণ করে দেবীপূজার জন্য ব্যস্ত থাকেন। পাঁচথুপির পুরাতন বাটির পুজোতে যেন প্রাচীনত্বের স্বাদ। পুজোর কদিন ঘোষ হাজরা বা ঘোষ রায়দের বাড়ির অতিথি হলেই সেই স্বাদ পাওয়া সম্ভব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.