সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: কাঁসাইয়ের জল বইছে উত্তর পাড়ে। সেখানেই রয়েছে মহাশশ্মান। চারপাশ ঘন জঙ্গল।গাছগাছালিতে ঠাসা। যেন তন্ত্রপীঠ! সেই অরন্যেই পুজো পায় পাথরের তৈরি মহিষাসুরমর্দিনী। তবে এখানে দুর্গতিনাশিনীর ডান পা আছে মহিষের উপরে।যা একেবারেই ব্যতিক্রমী। আজও পুরুলিয়ার আড়শার দেউলঘাটায় পুজো হয় আনুমানিক দু’হাজার বছরের পুরনো পাথরের মহিষাসুরমর্দিনীর।
কাঁসাই নদীর কোলে এই দেউলঘাটা এখন রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রেও প্রবেশ করেছে। যদিও পরিকাঠামোগত দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে। তবুও এই দেউলঘাটায় দেউল-সহ পাথর দিয়ে খোদাই করা মহিষাসুরমর্দিনীকে দেখতে হাজির হন পর্যটকরা। বর্তমানে এই পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন তনুশ্রী মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “এই মূর্তি বৌদ্ধ যুগের। মূর্তির গঠন-কারুকাজ দেখেই তা স্পষ্ট। মাথার উপর চক্রস্তম্ভ। তার তলায় পরীদের মূর্তি। মায়ের দু’পাশে অষ্টমাতৃকা রূপ। দেউলের দরজাগুলো ত্রিভুজাকৃতি। এই সবই বৌদ্ধ সংস্কৃতির ছাপ।” তবে এই নিয়ে অন্য মতও রয়েছে।
লোকসংস্কৃতির গবেষক সুভাষ রায় বলেন, “পুরুলিয়া জুড়ে জৈন সংস্কৃতির ছাপ রয়েছে। এটা জৈন প্রত্নস্থল ছিল। এখন ব্রাহ্মণদের সংস্কৃতিতে রূপান্তরিত হয়েছে।” তনুশ্রীদেবী বলেন, পাঠানরা এখানে আক্রমন করেছিলেন সেই কারনেই মায়ের হাতভাঙা। পাথর দিয়ে খোদাই করা এই মূর্তিতে মায়ের সঙ্গে তার পরিবার নেই। অপরূপ কারুকাজে তৈরি এই মহিষাসুরমর্দিনীর মূর্তিতে চোখ রাখলে কিছুতেই ফেরানো যায় না। তবে বছরের নির্দিষ্ট এই ৪ দিন নয়। নিত্য পুজোতেও ওইখানে ভিড় হয় ভক্তদের।
জানা গিয়েছে, গ্রামের রাজপুতরা এই পুজোয় শামিল। ষষ্ঠী থেকেই শুরু হয় চন্ডীপাঠ। সপ্তমী থেকে নবমী পালা করে মায়ের কাছে পাঁঠা বলি দেন রাজপুতরাই। তাঁদের নামেই সংকল্প হয়। সেই রাজপুত পরিবারেরই সদস্য ভুবন সিংহ বলেন, “মায়ের কৃপায় প্রতিবছর পুজোর যোগাড় হয়ে যায়। অর্থাভাব থাকলেও পুজোর সময় তা কখনও টের পায়নি।” এই তিনদিনই হয় অন্নভোগ। ভাত, ডাল,নানান ভাজা, সবজি, চাটনি, পায়েস দেওয়া হয়। অষ্টমীতে থাকে লুচি-মিষ্টিও। পাথরের মহিষাসুরমর্দিনী দেখতে যারাই দেউলঘাটায় হাজির হন তাঁদের সকলের জন্যই থাকে খাওয়ার ব্যবস্থা। একদিকে পাথর দিয়ে খোদাই করা মহিষাসুরমর্দিনীর পুজো অন্যদিকে রেখশিল্প শৈলীতে তৈরি দেউল দেখতে পুজোর দিনগুলিতে পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ে। অতীতে তিনটি দেউল থাকলেও এখন দু’টি মন্দির রয়েছে। কিছুদিন আগে পুরাতত্ব বিভাগ এই দেউলের সংস্কার করে। কিন্তু আবার সেই দেউল লতা–পাতায় জড়িয়ে গিয়েছে। তবে শুধু মহিষাসুরমর্দনীই নয়, এছাড়াও এই দেউলঘাটায় আরও নানান মূর্তির য়েছে। পূজিত হয় সেই সব মূর্তিও।
ছবি: সুনীতা সিং
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.