পলাশ পাত্র, তেহট্ট: দশমী মানেই আকাশে বাতাসে বিষাদের সুর। ফের শুরু দিন গোনার। আবার ১ বছর পর দেবী আসবেন মর্ত্যে। ফের শুরু অপেক্ষার। বিদায়ের আগে সিঁদুরখেলায় মাতলেন নদিয়ার কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ির রানি মা। সঙ্গে ছিলেন স্বামী ও ছেলে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই ওই রাজবাড়িতে ভিড় জমান এলাকার বাসিন্দারা। রীতি মেনে চলে দেবী বরণ, এরপরই শুরু হয় সিঁদুরখেলা। রানি অমৃতা রায় জানান, সকলের মঙ্গল কামনায় এই সিঁদুরখেলার আয়োজন। এবছর এই সিঁদুরখেলায় হাজির ছিলেন এক বিদেশি। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে নিয়ে গবেষণা করছেন তিনি।
১৬০৩ সালে রাজা রুদ্র রায় নদিয়ার কৃষ্ণনগরের রাজবাড়িতে পুজো শুরু করেন। রাজবাড়ির দুর্গা প্রতিমা, রাজরাজেশ্বরী মা এখানে যুদ্ধবেশে আবির্ভূতা। দেবীর গায়ে বর্ম। হাতে অস্ত্র। ঘোটকাকৃতি সিংহের উপর উপবিষ্টা তিনি। দেবীও দশভূজা। তবে, তাঁর দুই হাত সামনে। পেছনে আটটি ছোট হাত। একচালা প্রতিমার পিছনে অর্ধচন্দ্রাকৃতি ছটা। তাতে আঁকা দশমহাবিদ্যা। রীতি অনুযায়ী মহালয়ার পর দিন থেকেই শুরু হয় পুজো। চলে নবমী পর্যন্ত। নবমীর রাতে গঙ্গা জল, মধু, ঘি, কলা, পানের আহুতি দিয়ে হোমের আগুন নেভানো হয়। রাজরাজেশ্বরী পাটে আসীন হন বোধনের সময়ে। তাকে বেহারাদের কাঁধে চড়িয়ে আনা হয়। এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ হল সন্ধিপুজো। সন্ধিপুজোর সময়ে ধোঁয়ায় ঢেকে যায় দেবীর মুখ।
প্রচলিত বিশ্বাস, সেই সময়ে মা আসেন কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে। ২০০২ সিঁদুরখেলা চালু করেন বর্তমান রানি অমৃতা রায়। তিনি কথায়, এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ হল দশমীর সিঁদুরখেলা। আশেপাশের অনেক মহিলা এই সিঁদুরখেলায় অংশগ্রহণ করেন। আগে এখানে অন্নপূর্ণার পুজো হতো। দুর্গাপুজোতে হতো ছাগবলি। এখন অবশ্য শুধু মাত্র আখ ও চালকুমড়োর বলি হয়। আগে দশমীর দিন ওড়ানো হতো নীলকণ্ঠ পাখি। এখন সেটাও বন্ধ। তবে তাতে পুজোর জাঁক কমেনি বলেই জানান বর্তমান রাজা সৌমিশচন্দ্র রায়। বিসর্জনের পর আজও রাজবাড়ির নাটমন্দিরের পাশেই শত্রুবলি হয় বর্তমান কর্তার হাতে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.