অরূপ বসাক, মালবাজার: আজ একাদশী। সবে প্রতিমা বিসর্জন হওয়া শুরু করেছে। বিজয়ার শুভেচ্ছা বার্তা বিনিময়, ছোট-বড় সকলের সঙ্গে আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া এসবেই মেতে বাঙালি। তবে এমন এক জায়গা রয়েছে যেখানে শারদোৎসবের রেশ কিন্তু এখনও চলছে। কারণ, সেখানকার পাটে এখনও পূজিত হচ্ছেন দূর্গা। পরোক্ষভাবে বলতে গেলে মা দুর্গারই আরও এক রূপ পূজিত হচ্ছে। দশমীতে যেদিন আর সব জায়গায় প্রতিমা বিসর্জনের রীতি প্রচলিত রয়েছে, সেখানে উত্তরবঙ্গের এই গ্রামে কিন্তু ঠিক দশমীতেই প্রতিমা প্রতিস্থাপন করা হয়। যেই মূলত ভান্ডানি পুজো নামেই পরিচিত সেই অঞ্চলে।
কী এই ভান্ডানি পুজো? ভান্ডানিকে আসলে এই গ্রামের মানুষেরা বনের দেবীরূপে পুজো করেন। তাই ভান্ডানির আরও এক নাম এই বনদুর্গা। অতএব ভান্ডানি পুজো বনদুর্গা নামেও পরিচিত। মা কৈলাসে ফিরে যাওয়ার সময় রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষজন দেবীর পথ আটকায় জঙ্গলে। এই বসুন্ধরা যেন শস্যশ্যামলা পূর্ণ হয়ে ওঠে সেই আশায় দেবীর পুজা করেন গ্রামবাসীরা। উত্তরবঙ্গে মূলত জলপাইগুড়ি-ময়নাগুড়ির আশেপাশের গ্রামগুলিতে এই পুজো হয়। প্রতিবছর দুর্গা পূজার রেশ কাটতে না কাটতেই এখানে শুরু হয়ে য়ায় মা ভান্ডনির পুজো। দশমীতে যেখানে সারা বাংলাজুড়ে বিদায়বেলায় বিষাদের সুর বেজে ওঠে, সেখানে শুধুমাত্র এই অঞ্চলেই আবার নতুন করে শুরু হয় দুর্গা আরাধনা। যেই রীতিকে ভালবেসে তাঁরা ভান্ডানি পুজো বলে। যেই পুজো উপলক্ষে মেলাও বসে সেখানকার গ্রামাঞ্চলগুলিতে।
প্রতি বছরের মতো এবছরও ৪১তম ভাণ্ডানি পুজোর আয়োজন করেছে মালবাজার মহকুমার মেটেলি ব্লকের দক্ষিণ ধুপঝোরার মিলন সংঘ। দশমীর দিন এখানে মা ভান্ডানির প্রতিমা স্থাপন করা হয়। একাদশীতে পুজো ও মেলা হয়। এখানে মা দুর্গার মতোই ভান্ডানির বাহনও সিংহ। এছাড়াও কার্তিক, গণেশ, লক্ষী, সরস্বতী ও মহাকালের পুজো হয় এর সঙ্গে। পুজো ও মেলাকে কেন্দ্র করে বড়ো মণ্ডপ-সহ তোরণ ও আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই বহু দোকানপাটও বসেছে সেই মেলা প্রাঙ্গনে। পুজো কমিটির সভাপতি জাগরনাথ রায় বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও সাড়ম্বরে এই পুজো করা হচ্ছে। আজ ও কাল মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। মেলা-সংলগ্ন এলাকাগুলি থেকে বহু দোকানপাট ও জনগণের আগমন হয়। আরতি প্রতিযোগিতাও হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.