স্টাফ রিপোর্টার: দলের নেতা হোন, বা প্রশাসনের কর্তা, কেউ এমন কিছু করবেন না, যাতে মানুষের ক্ষতি হয়৷ জনস্বার্থে আঘাত লাগে এমন জিনিস বরদাস্ত হবে না৷ শুক্রবার সল্টলেকের ইজেডসিসিতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলাকে নিয়ে নতুন সরকারের অষ্টম প্রশাসনিক বৈঠকে এই কঠোর বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
বারবার বলা সত্ত্বেও সীমাহীন গোষ্ঠী রাজনীতি করে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করা কিছু নেতাকেও এদিন সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি৷ কাকলি ঘোষদস্তিদার, সব্যসাচী দত্ত, সুজিত বসু ও পূর্ণেন্দু বসুদের সঙ্গে বৈঠকের পর ঘরোয়া আলোচনায় বলেছেন, “পরিষ্কার শুনে রাখো৷ তোমাদের লড়াইয়ের জন্যই মানুষ অখুশি হয়ে অনেক এলাকায় ভোট দেয়নি৷ কে কার লোক দেখব না৷ তোমাদের খেয়োখেয়িতে যদি সাধারণ মানুষের স্বার্থে আঘাত লাগে, বরদাস্ত করব না৷ অনেক হয়েছে৷ আর এ জিনিস চলবে না৷” বস্তুত, বাগুইআটি, রাজারহাট, সল্টলেক, লেকটাউন এলাকায় তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের ইগোর লড়াইয়ের জন্যই দলীয়ভাবে নানা সমস্যা হচ্ছে৷ বেআইনি প্রোমোটিং, সিন্ডিকেট ইত্যাদি চক্রগুলির বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী কঠোর হলেও তা বন্ধ করা যাচ্ছে না৷ তার ফলেই দেখা দিচ্ছে নানা অশান্তি, সংঘর্ষ৷ সাধারণ মানুষের স্বার্থে মমতা যে এবার কাউকেই রেয়াত করবেন না, তা এদিন স্পষ্ট৷
এদিন বৈঠকে পুলিশের উদ্দেশে বলেন, “সীমান্তে চোরাচালান, গরু পাচার, অনুপ্রবেশ-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় চুরি-ডাকাতির মতো ঘটনা বাড়ছে৷ আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে৷ তবে আর পুলিশ থেকে কাজ কী? মানুষ আর অভিযোগ করবে কেন?” যা নিয়ে পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সীমান্তে গরু চালান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার কথা পুলিশকে বলা হয়েছে৷ আইনশৃঙ্খলাও কঠোরভাবে রক্ষা করতে হবে৷ তার জন্য সঠিক পরিকল্পনা দরকার৷ প্রত্যেকটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সিসিটিভি লাগাতে হবে৷ পুর এলাকায় যাতে ভালভাবে কাজ হয় তারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ আইনশৃঙ্খলায় বিশেষ নজরদারির কথা বলা হয়েছে৷” বৈঠকে ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিত্ করপুরকায়স্থর মতো প্রশাসনিক কর্তারা৷
জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক-সহ ছিলেন সাংসদ, মন্ত্রী, বিধায়করাও৷ বস্তুত, উত্তরকন্যায় বুধবার যেখানে মুখ্যমন্ত্রী শেষ করেছিলেন, সল্টলেকের বৈঠকে সেখান থেকেই শুরু করলেন৷ উত্তরবঙ্গের বৈঠকে সেচ, পূর্ত, বন দফতরে ঘুঘুর বাসা ভাঙার কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এদিন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বৈঠকে দল ও প্রশাসনের শাসন করে রাজধর্ম পালন করলেন মমতা৷ প্রশাসনিক বৈঠকে পুলিশকে উদ্দেশ করে বলেন, বনগাঁ, বসিরহাটের মতো সীমান্তবর্তী এলাকায় আরও বেশি করে নজরদারি বাড়াতে হবে৷ জেলার আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে আপস করা যাবে না৷ এলাকায় টহলদারি বাড়াতে হবে পুলিশকে৷ যেমন মানুষের পাশে থাকতে হবে, তেমনই দুষ্কৃতীদের ভয়ের কারণ হয়ে উঠতে হবে পুলিশকে৷ তবেই অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব৷ সম্প্রতি বাগুইআটি, রাজারহাট, সল্টলেকে চুরি-ডাকাতির মতো ঘটনা অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে৷ সোদপুরে ঘটে গিয়েছে সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনা৷ ফলে আইনশৃঙ্খলা প্রশ্নের মুখে পড়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ মোড়, শপিং মল, প্রেক্ষাগৃহে বসানো হবে সিসিটিভি৷ মানুষের কাছে যাতে দ্রুত ও সহজে পুর পরিষেবা পৌঁছে যায়, সেদিকেও কঠোর নির্দেশিকা জারি করেছেন৷ একইসঙ্গে জেলাজুড়ে অসংখ্য কর্মসংস্থানের কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ জেলাজুড়ে ১ লক্ষ ৪৫ হাজার কর্মসংস্থান হবে৷ ক্ষুদ্রশিল্পে আগামী আড়াই বছরে বিনিয়োগ হবে ৪৫ কোটি টাকা৷ মূলত জেলার তিনটি জায়গায় টেক্সটাইল হাব তৈরির কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পাশাপাশি ফ্লাইওভার, নতুন রাস্তা, হাইওয়ে তৈরি ও সংস্কারের মধ্যে দিয়ে জেলার সার্বিক উন্নয়নে নজর দেওয়ার নির্দেশ প্রশাসনকে দিয়েছেন তিনি৷ বনগাঁয় হবে নতুন বাস টার্মিনাস৷
এদিন তিনি জেলার বৈঠক করেন সল্টলেকে৷ সল্টলেকও যে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার একটি অংশ, উন্নয়নে যে জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া দরকার, একইসঙ্গে সাংগঠনিক দিক থেকেও যাতে সেই এলাকা পিছিয়ে না থাকে সেই বার্তা দিতেই এদিন সল্টলেকে জেলার বৈঠক সারেন মুখ্যমন্ত্রী৷ যেমনটা আলিপুরদুয়ারের সেরেছিলেন হাসিমারার মতো প্রান্তিক এলাকায়৷ এভাবেই রাজ্যের তথা জেলার প্রতিটি অংশ ছুঁয়ে যেতে চাইছেন মমতা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.