সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নিয়ন্ত্রণরেখায় লাগাতার উসকানি দিয়ে চলেছে পাকিস্তান। তাদের গোলাবর্ষণে প্রাণ যাচ্ছে নিরীহ ভারতীয়দের। এর মাঝেই দেশের অন্দরে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি পাকিস্তানে! শহরে-শহরে বিস্ফোরণ, হামলা। নিশানায় সেনাকর্তারা। বুধবারই বালোচিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে উড়েছে সেনা কনভয়। প্রাণ গিয়েছে অন্তত ১৪ সেনা আধিকারিকের। হামলার দায় স্বীকার করেছে বালোচ বিদ্রোহীরা। ইতিমধ্যে হামলার ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে।
একইদিনে পাক সেনার উপর জোড়া হামলা হয় বালোচিস্তানে। বুধবার বোলানের শোরকান্ডে সেনা কনভয়ে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে আইইডি বিস্ফোরণ হয়। অন্তত ১২ সেনা আধিকারিকের মৃত্যু হয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন স্পেশাল অপারেশন কমান্ডার তারিক ইমরান, সুবেদার উমর ফারুক-সহ আরও অনেকে। সেনার গাড়িটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। এদিনই দুপুর ২টো ৪০ মিনিটে কেছের কুলাগ তিগরানেও রিমোট কন্ট্রোল পরিচালিত আইইডি বিস্ফোরণ হয়। তাতে বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডের দুই আধিকারিকের মৃত্যু হয়।
Video out yesterday by BLA of a Pak Army vehicle being absolutely smoked by them in the mountainous Bolan area of Balochistan. 14 Pak Army personnel reportedly killed. pic.twitter.com/6SPhUfSDTG
— Shiv Aroor (@ShivAroor) May 8, 2025
হামলার দায় স্বীকার করেছে বালোচ বিদ্রোহীরা। বালোচ লিবারেশন আর্মির মুখপাত্র জেয়নাদ বালোচ বলেন, “পাক সেনা তার কৌলিন্য হারিয়েছে। সশস্ত্র গুণ্ডাবাহিনীতে পরিণত হয়েছ। বালোচদের জমি দখলের চেষ্টা করছে। তাদের বিরুদ্ধে অপারেশন চলবে। হামলার তীব্রতা আরও বাড়বে।”
সম্প্রতি বালোচ বিদ্রোহীরা আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়েছে। মার্চ মাসে বালোচিস্তান প্রদেশের কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের পেশোয়ারে যাচ্ছিল যাত্রীবাহী জাফার এক্সপ্রেস। পাক সেনাকর্মী থেকে শুরু করে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই ও নিরাপত্তা বাহিনীর অনেকেই ছিলেন ওই ট্রেনে। সকাল ৯টা নাগাদ কোয়েটা থেকে ছাড়ে ট্রেনটি। এরপর দুপুর নাগাদ প্রায় ৫০০ যাত্রী-সহ এই ট্রেনের দখল নেয় বালোচ বিদ্রোহীরা। তাদের দাবি ছিল, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। তা না হলে পণবন্দিদের খুন করা হবে। সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই পণবন্দিদের সকলকে উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে এই অপহরণের ঘটনায় বালোচ লিবারেশন আর্মির দাবি, তারা অন্তত ৫০ জন সেনাকে খুন করেছে।
এই জাফার এক্সপ্রেসই প্রথম নয়, অতীতেও বহুবার বড়সড় হামলা চালিয়ে পাকিস্তানকে রক্তাক্ত করেছে এই বালোচ বিদ্রোহীরা। পাকিস্তানের সব থেকে বড় প্রদেশ বালোচিস্তান। এখানেই জন্ম বালোচ লিবারেশন আর্মির (বিএলএ)। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মের পর থেকেই আলাদা হওয়ার দাবি জানিয়েছে বালোচিস্তান। ২০০০ সালের শুরুর দিকে এই প্রদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করার দাবিতে পাক সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে বিএলএ। তারপর থেকে পাকিস্তানি শাসনের শৃঙ্খল ভেঙে ফেলতে লড়াই চালাচ্ছে বালোচ বিদ্রোহীরা। পালটা গুমখুন, হত্যা ও ধর্ষণের মতো অমানুষিক অত্যাচার চালিয়ে বিদ্রোহের আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে ইসলামাবাদ। বিশেষ করে চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর তৈরি হওয়ার পর থেকেই আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে বালোচিস্তান। অভিযোগ, খনিজ সমৃদ্ধ প্রদেশটিকে কার্যত লুট করছে পাক প্রশাসন। প্রতিদানে বালোচ জনতা পাচ্ছে শুধুই নির্যাতন ও দারিদ্র। সবমিলিয়ে পাকিস্তানের অন্দরে কার্যত গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.