Advertisement
Advertisement
London

বিলেতে বাঙালির চিনা রেস্তরাঁয় ট্যাংরার মনিকার জীবনী

ঢ্যাঁড়শ থেকে ফুলকপির ইন্দো-চাইনিজ পদে মাতোয়ারা লন্ডনের অবাঙালিরাও।

Indian and Chinese origins running restaurant together in London

হক্কা গার্ডেনের কর্ণধার সায়ন্তন দাস অধিকারী ও শেফ স্টিভেন লির হাতে কলকাতার চিনেপাড়ার প্রবাদপ্রতিম মনিকা লিউয়ের জীবনী।

Published by: Amit Kumar Das
  • Posted:May 6, 2025 11:57 am
  • Updated:May 6, 2025 11:57 am  

কুণাল ঘোষ, হ‌্যারো: এই নিয়ে আটবার লন্ডনে এলাম। যখন যে কর্মসূচিতেই আসি না কেন, প্রতিবারই নানা স্বাদের, নানা ঠিকানার নামী ও অনামী রেস্টুরেন্টেও ঢুকে পড়ি। স্বাদ নেই চেনা-অচেনা দেশ-বিদেশের নানা পদের, বিচিত্র সুস্বাদু খাবারের।

যখন যে দেশে গিয়েছি, সেখানকার খাবারে যেমন তৃপ্তি পেয়েছি, তেমনই সাগরপাড়ে কলকাতার রেসিপিতে সুস্বাদু কিছু পেলে তা টেস্ট করার জন্য বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করিনি। এবার সেই খাবারের সন্ধানে নেমে এমন এক চাইনিজ রেস্টুরেন্টের কাহিনি শোনাব যা শুধু গল্প নয়, খাদ‌্যাভ‌্যাস সংস্কৃতির এক বিচিত্র যাত্রাপথ। যার শুরু চিনের প্রাচীরের ওপারে, কলকাতার ট‌্যাংরার চিনেপাড়া হয়ে বং কানেকশন ধরে বর্তমান ঠিকানা নর্থ লন্ডনে হ‌্যারোর কুইন্সবেরি।

Advertisement

অভিনব ও জিভে জল আনা বিচিত্র সুস্বাদু খাবারে ঠাসা এই রেস্তোরাঁর নাম ‘হাক্কা গার্ডেন’। কর্ণধার সায়ন্তন দাস অধিকারী। কলকাতায় জন্ম-বেড়ে ওঠা, কর্মজীবনের প্রায় দু’-দশক তিলোত্তমায় কাটিয়ে আপাতত ব্রিটিশ পাসপোর্ট নিয়ে জমিয়ে লন্ডনে ব‌্যবসা করছেন এই বাঙালি সন্তান। তবে শুধু ব‌্যবসা নয়, নিজের রেস্তোরাঁ ও অফিসে প্রচুর বাঙালির কর্মসংস্থানেরও ব‌্যবস্থা করেছেন সায়ন্তন। এবার লন্ডন মহোৎসবে অংশ নিয়ে সোমবার হ‌্যারোতে পা রেখেই ঢুকে পড়লাম বাঙালি তথা ভারতীয় খাদ্যরসিকদের ভালোবাসার এই ঠিকানায়। হবেই না কেন, ঢুকতেই যে স্বাগত জানাল তাঁর নাম স্টিভেন লি। ঝকঝকে চেহারা, স্মার্ট শেফ ট‌্যাংরার চিনেপাড়ায় দীর্ঘদিন থাকার কারণে ইংরেজি-চিনা ভাষার পাশাপাশি বাংলা ও হিন্দিটাও বেশ ভালো বলতে পারেন। খাবারের নানা পদ নিয়ে আমরা যখনই প্রশ্ন করেছি সঙ্গে সঙ্গে তা বাংলাতেই বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। চিকেন-মটন থেকে শুরু করে নানা ধরনের মাছের পদ দিয়ে পৃথিবীর কত স্বাদের চাইনিজ যে হতে পারে তার দীর্ঘ তালিকা হাক্কা গার্ডেনের মেনুতে দেখে মুগ্ধ হয়েছি।

কলকাতার একসময়ের জনপ্রিয় শেফ এখন হাক্কা গার্ডেনে হরেক পদের খাবার বানিয়ে ব্রিটেনের খাদ‌্যরসিকদের মন জয় করে নিয়েছেন। কারণটা আর কিছুই নয়, লন্ডনে এই রেস্তোরাঁয় যে চাইনিজ পাওয়া যাচ্ছে সেটা সাংহাই-বেজিংয়ের রেসিপিতে তৈরি হয় না। পুরোপুরি কলকাতার চিনে পাড়ার রেসিপি ধরে তৈরি শেফ স্টিভেনের খাবারের স্বাদ লন্ডনে ইতিমধ্যে ‘ইন্দো-চাইনিজ’ নামে মুখে মুখে ফিরছে। বস্তুত সেই কারণেই এখন উইকএন্ডে খাস লন্ডনের বিভিন্ন জোন থেকে ভারতীয়রা দলে দলে এই ইন্দো-চাইনিজ খাবারের টানে এসে ভিড় করছেন হাক্কা গার্ডেনে। কর্ণধার সায়ন্তনের কথায়, ‘‘শনি-রবি এখানে অনেক আগে থেকে টেবিল বুকিং হয়ে যায়। অনেকে আবার বাঙালি অভ‌্যাসবশত কলকাতার মতো পার্সেল নিয়েও বাড়িতে ফেরেন।’’

সপ্তাহের প্রথমদিন হলেও হাক্কা গার্ডেনে লাঞ্চ টাইমে বেশ ভিড় ছিল। আর সেখানেই এদিন অনিরুদ্ধ রায় নামে ট‌্যাংরার এক ব‌্যবসায়ী স্টিভেন লি ও সায়ন্তনের হাতে একটি বিরল বই তুলে দিলেন। নাম ‘ক‌্যালকাটা চাইনিজ– এ বায়োগ্রাফি অফ মনিকা লিউ’। লেখিকা শাঁওলি চক্রবর্তী, প্রকাশক রৌণক পাবলিকেশন-এর রূপা মজুমদার। মনিকা নামে যাঁর জীবনী নিয়ে লেখা, তিনি ট‌্যাংরার চিনেপাড়ায় ‘বেজিং’, ‘কিমলিং’ ও ‘টুংফুং’-এর মতো বেশ কয়েকটি নামী চাইনিজ রেস্তোরাঁর কর্ণধার। একটা কথা বলতেই হবে, কলকাতার অন‌্যতম এই মহিলা শিল্পোদ্যোগী মনিকার হাত ধরেই চিনেপাড়ার খাদ‌্য ব‌্যবসা কীভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তার অজানা কাহিনি বইটির পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে। আর বলতে দ্বিধা নেই, মনিকার এই রেস্তরাঁগুলিতে আমরা বিভিন্ন সময়ে নানা স্বাদের অজস্র চাইনিজ খাবার খেয়ে কলকাতার চাইনিজের গুণগান করেছি। এবার থেকে সাগরপাড়ে এই হাক্কা গার্ডেনে মনিকার জীবনী ঘেরা বইটি যেমন থাকবে, তেমনই বং কানেকশনে গড়ে ওঠা রেস্তোরাঁয় পাবেন ইন্দো-চাইনিজ নানা ফ্লেভারের বিচিত্র স্বাদের খাবার।

হাক্কা গার্ডেন ঘুরে দেখার পাশাপাশি স্টিভেন লি-র পছন্দের বেশ কয়েকটি ডিশ নিয়ে খেতে খেতে শুনছিলাম ভারতীয় বিশিষ্টদের কারা এখনও পর্যন্ত সায়ন্তনের এই রেস্তরাঁয় পা দিয়েছেন। তালিকাটা অবশ‌্য খুব ছোট নয়। পহেলগাঁও নিয়ে বিতর্কের মধ্যে চমকে দেওয়া নাম পাকিস্তানি গায়ক গোলাম আলি হাক্কা গার্ডেনের খাবার খেয়ে রীতিমতো ফিদা হয়ে গিয়েছিলেন বলে শোনাচ্ছিলেন শেফ স্টিভেন। এসেছেন মুম্বইয়ের অভিনেতা গোবিন্দা, সংগীতশিল্পী অনুপ জালোটা, টলিউডের ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, আবির চট্টোপাধ‌্যায়ের মতো বহু বাঙালি সেলিব্রিটি। আর লন্ডনের মেয়র সাদিক খান ও ডেপুটি মেয়র রাজেশ আগরওয়াল সপার্ষদ হাক্কা গার্ডেনে এসে শুধু ইন্দো-চাইনিজের স্বাদ নেননি, দীর্ঘক্ষণ ধরে তারিয়ে তারিয়ে নিরামিষ চাইনিজ পদও খেয়েছেন। চিলি ফিশের একটা দুর্দান্ত স্বাদের খাবার খেতে খেতে শুনছিলাম স্থানীয় গুজরাতিদের চাইনিজ প্রীতির কথা। সায়ন্তনের স্ত্রী নবমিতা বলছিলেন, ‘‘হ‌্যারোর চারপাশে অনেক গুজরাতি থাকেন। তাঁদের মনপসন্দ আবার স্টিভেনের তৈরি নিরামিষ-চাইনিজ।’’

আচমকা নবমিতার মুখে নিরামিষ-চাইনিজ শুনে কৌতূহল অনেকটাই বেড়ে গেল। প্রশ্নের উত্তরে সায়ন্তন-জায়ার ব‌্যাখ‌্যা, ‘‘মেনুতে পোশাকি নাম ক্রিসপি ওকড়া এবং চাউচু কলিফ্লাওয়ার, এই দুটোরই বিরাট ডিমান্ড। আসলে প্রথমটা ঢ্যাঁড়শ ভাজা আর দ্বিতীয়টি ফুলকপির রেসিপি।’’ শুনে সঙ্গে থাকা অন‌্যদের হাসি আর থামছিল না। তবে শুনছিলাম এই বং-কানেকশনে গড়ে ওঠা ইন্দো-চাইনিজ রেস্তোরাঁয় পাঞ্জাবি-মারাঠি-সহ ভারতের অন‌্যান‌্য প্রদেশের প্রবাসীদের জন‌্য পনিরের নানা পদের চাইনিজও তৈরি করতে হয় কলকাতা থেকে আসা বাঙালিদের।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement