সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারত-পাকিস্তানের শত্রুতা মুছে গেল ইউক্রেনে (Ukraine Crisis)। রাশিয়ার যুদ্ধে বিধ্বস্ত ইউক্রেনে আটক প্রায় আড়াই হাজার ভারতীয় পড়ুয়াকে উদ্ধার করে নিরাপদে সীমান্ত পার করিয়ে দিলেন মোয়াজ্জাম খান নামের এক পাকিস্তানি বাস ট্যুর ম্যানেজার। ক্ষুধা-তেষ্টায় বিপন্ন ছেলেমেয়েগুলোকে কিনে খাওয়ালেন খাবার। সুমিতে নিজের পরিবার আটকে পড়লেও ভারতীয় পড়ুয়াদের উদ্ধার করার কাজে কর্তব্য পালনে কোনও ত্রুটি রাখলেন না পাক নাগরিক।
মোয়াজ্জাম খানের কথায়, “ওরা তো সবাই আমার ভাই-বোন। আমি পাকিস্তানি বলে
কোনও ভারতীয়কে সাহায্য করব না এতটা অশিক্ষিত, ছোট মনেরও হওয়া উচিত নয়।”
ভারতীয় পড়ুয়াদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে বাড়ি ফিরতে সাহায্য করলেও মোয়াজ্জেমের বউদি-সহ ভাইপো, ভাইঝিরা আটকে রয়েছেন রুশ হামলায় (Russia-Ukraine Conflict) বিধ্বস্ত পূর্ব ইউক্রেনের সুমিতে। দাদা রয়েছেন কিয়েভের কাছে।
২৮ বছরের মোয়াজ্জেম রয়েছেন পশ্চিম ইউক্রেনের টর্নোপিল শহরে। সেখানেই তিনি এখন সবার প্রিয় ‘খানভাই’। ১১ বছর আগে ইসলামাবাদের তারবেলা ক্যান্টনমেন্ট থেকে ইউক্রেনের টর্নোপিলে চলে এসেছিলেন মোয়েজ্জেম এবং তাঁর পরিবার। সেখানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার পর কেরিয়ার বদলে শুরু করেন বাসের ব্যবসা।
জানা গিয়েছে, মোয়াজ্জেমের সংস্থার বাস টর্নোপিল থেকে পড়ুয়াদের উদ্ধার করে সেখান থেকে পাঁচ ঘণ্টার দূরত্বের হাঙ্গেরি বা স্লোভাকিয়া সীমান্তে পৌঁছে দিচ্ছে। অনেককে পোল্যান্ড সীমান্তে পাঠিয়েছে। অন্যান্য ট্যুর সংস্থাগুলি বাস যখন এই পরিষেবা দেওয়ার জন্য পড়ুয়াদের থেকে ২৫০ ডলার করে নিয়েছে, সেখানে মানবিকতার নজির দেখিয়ে মোয়াজ্জেম নেন মাত্র ২০ বা ২৫ ডলার। অনেক অভাবি পড়ুয়াকে বিনামূল্যেও তুলে নেন বাসে।
ভারতীয়দের সঙ্গে তাঁর এত গভীর সম্পর্ক হয়ে যাওয়ার কারণ হিসাবে ভাষাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, “আমি উর্দুতে কথা বলি। বেশিরভাগ ভারতীয় পড়ুয়াই হিন্দি বলে। দু’টো ভাষাই প্রায় এক। তাই আমাদের দারুণ মিলমিশ হয়ে গিয়েছিল। পড়ুয়াদের একটা দলকে সীমান্তে পৌঁছতে সাহায্য করার পর আমার ফোন নম্বর ছড়িয়ে পড়ে। দিনরাত গাড়ির জন্য ফোন আসতে থাকে। পরে যাঁরা গাড়ি পাচ্ছিলেন না তাঁদের জন্য খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থাও করতে থাকি। অসময়ে ১৮-১৯ বছরের ভাই-বোনদের একা ছাড়ব কোন বিবেকে?”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.