সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘গুগাবাবা’র গানে উঠে আসা অমোঘ বাণী ‘রাজ্যে রাজ্যে পরস্পরের যুদ্ধে অমঙ্গল’ যেন প্রতি মুহূর্তে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে রাশিয়ায় (Russia)। দেখতে দেখতে প্রায় তিন বছর হতে চলল মস্কোর ইউক্রেন হামলার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এমন ভয়ানক যুদ্ধ আর দেখেনি ইউরোপ। আর এখনও নিষ্পত্তি না হওয়া সেই যুদ্ধের ধাক্কায় কাহিল রুশ অর্থনীতি।
গত কয়েক বছর মুদ্রাস্ফীতির ধাক্কা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন মার্কিনীরা। কিন্তু সেদেশের তুলনায় অবিশ্বাস্য উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছে রাশিয়ার মুদ্রাস্ফীতি। মাখন, মাংস, পেঁয়াজের দাম গতবছরের তুলনায় বেড়ে গিয়েছে ২৫ শতাংশ। সরকারি তথ্য থেকেই এমনটা জানা যাচ্ছে। আর এই পরিস্থিতিতে বহু সুপার মার্কেট ‘মহার্ঘ’ মাখন তুলে রাখছে তালাবন্ধ ক্যাবিনেটে।
মুদ্রাস্ফীতি যে হতে পারে তা অবশ্য আগেই অনুমান করা গিয়েছিল। কিন্তু সেদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের আন্দাজের থেকেও সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ অনেক বেশি। প্রায় ১০ শতাংশ। কিন্তু কেন এই বিপুল মুদ্রাস্ফীতি? আসলে ক্রেমলিন বিপুল অর্থ খরচ করেছে সামরিক ক্ষেত্রে। কিন্তু সেটা সমস্যা নয়। পশ্চিমি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারত-চিনের মতো দেশ লাগাতার অপরিশোধিত তেল কিনে চলেছে। এমনকী ন্যাটোর সদস্য দেশ হওয়ার পরও জার্মানি কিন্তু গ্যাসের জন্য আজও নির্ভরশীল রাশিয়ার উপরে। ফলে তহবিলে ঘাটতি নেই। আসল সমস্যা অন্যদিকে। আসলে লক্ষ লক্ষ রুশ সেনা মোতায়েন যুদ্ধে। যুদ্ধে সেনামৃত্যুর জন্য যে বিপুল আর্থিক সাহায্য (পুতিনের ডেথোনমিস্ক) দিতে হচ্ছে তার পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রে কর্মী পিছু খরচও বেড়ে যাচ্ছে কর্মীর অপ্রতুলতার জন্য। আর এই পরিস্থিতি চলছে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে। এত দীর্ঘ সময় ধরে এমন অবস্থা চলারই খেসারত এখন দিতে হচ্ছে রুশ অর্থনীতিকে।
রাশিয়ার অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ আলেকজান্দ্রা প্রোকোপেঙ্কো সিএনএনের সঙ্গে কথা বলার সময় জানিয়েছেন, ”দাম বাড়ছে যুদ্ধের জন্যই। অর্থনীতিতে চাহিদা অনুৎপাদনশীল ব্যয়ের কারণে বৃদ্ধি পায়। আবার শ্রমিকদের মজুরিও বাড়ে নিয়োগকারীদের প্রতিযোগিতার জন্য।” অন্যান্য অর্থনীতিবিদরা একে ‘উন্নয়ন ছাড়াই বৃদ্ধি’ বলে অভিহিত করছেন। ফলে জাতীয় আয় বাড়লেও স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও পরিকাঠামোর ব্যাপক উন্নতি হয়নি।
মুদ্রাস্ফীতির মোকাবিলা করতে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক গত মাসেই সুদের হার রেকর্ড ২১ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু তাতেই পরিস্থিতির সুরাহা হয়নি। রুশ অর্থনীতিবিদদের প্রভাবশালী একটি গ্রুপের দাবি, মুদ্রাস্ফীতির চাপ কেবল অব্যাহত থাকবে না বরং বাড়তেও পারে। ফলে সব মিলিয়ে একদিকে যুদ্ধের চাপ, অন্যদিকে মুদ্রাস্ফীতির যন্ত্রণা- এই জোড়া ফাঁসে আপাতত চিন্তার বিরাট ভাঁজ পুতিনের কপালে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.