সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও তালিবানের শাসনে বিবর্তনের পথে পিছু হাঁটছে আফগানিস্তান (Afghanistan)। জেহাদিদের জমানায় সেদেশে নারীশিক্ষা, মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলির যে কোনও মূল্য নেই তা স্পষ্ট। নিজেদের কুৎসিত চেহারা প্রকাশ্যে এনে মহিলাদের অধিকারের দাবিতে মিছিল করা মানবাধিকার রক্ষা কর্মীকে ‘কাফের’ আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকিও দিয়েছে জঙ্গিরা। অথচ নিজেদের মেয়েদের দিব্যি বিদেশের স্কুলে পাঠাচ্ছে তালিবরা। সম্প্রতি এক রিপোর্টে আখুন্দজাদার সংগঠনের এহেন দ্বিচারিতা প্রকাশ্যে এসেছে।
জানা গিয়েছে, অন্তত একডজন তালিবান নেতার মেয়েরা বিদেশের স্কুলে শিক্ষারত। সেখানে আর পাঁচটা সাধারণ পড়ুয়ার মতোই রুটিন মেনে চলছে তারা। খেলাধুলো থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছে। সেক্ষেত্রে ‘ইসলামের অবমাননা’ নিয়ে বিশেষ চিন্তিত নয় তারা। অথচ, আফগানিস্তানে ইসলামের দোহাই দিয়ে মেয়েদের ষষ্ঠ শ্রেণির পর আর স্কুলে আসার অনুমতি দেয় না তালিবান। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই এহেন দ্বিচারিতায় সমালোচনার মুখে পড়েছে হায়বাতোল্লা আখুন্দজাদার দল। যদিও, সমালোচনা বা আন্তর্জাতিক মঞ্চের ধিক্কার সেই অর্থে কোনওদিনই কানে তোলেনি তালিবান। সূত্রের খবর, তালিবান সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কলন্দর এবাদ, উপ বিদেশমন্ত্রী শের মহম্মদ আব্বাস স্তানিকজাইর মেয়েরা বিদেশের স্কুলে পড়াশোনা করছে। ওই তালিকায় নাম রয়েছে তালিবানের মুখপাত্র সোহেল শাহিনের নামও।
সূত্রের খবর, সোহেল শাহিনের দুই মেয়ে ও তিন ছেলে দোহার একটি স্কুলে পড়াশোনা করছে। শুধু তাই নয়, তালিবানের অন্যতম পরিচিত মুখ শাহিনের বড় মেয়ে স্কুলের ফুটবল ক্যাপ্টেন। বলে রাখা ভাল, দোহায় তালিবানের বা ইসলামিক আমিরশাহীর রাজনৈতিক দপ্তর রয়েছে। প্রকাশ্যে এসেছে যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কলন্দর এবাদের কন্যা একজন চিকিৎসক। নানগরহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর পাকিস্তান ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সে ভরতি হন তিনি। বর্তমানে ইসলামবাদে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত কলন্দর এবাদের কন্যা। এদিকে, স্তানিকজাইর কন্যা দোহা থেকে ডাক্তারি পাশ করেছেন বলে খবর।
উল্লেখ্য, গত মার্চ মাসে আফগানিস্তানে মেয়েদের জন্য স্কুল খোলার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বন্ধ করে দিয়েছিল তালিবান। সেই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে পালটা বিবৃতি দেয় রাষ্ট্রসংঘ (United Nations)। এহেন ঘটনার প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে রাষ্ট্রসংঘ জানায়, দেশের প্রত্যেক শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের শিক্ষার অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে তালিবানকে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মঞ্চের হুঁশিয়ারি বা আবেদন কোনওটাই যে তালিবানের কানে পৌঁছয় না তা স্পষ্ট। জেহাদিদের আমলে আবারও প্রস্তরযুগে ফিরে গিয়েছে ষাটের দশকের সেই আধুনিক আফগানিস্তান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.