সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ‘একনায়ক’ বলে তুলোধনা করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলেছিলেন, নির্বাচন ছাড়াই ক্ষমতায় রয়ে গিয়েছেন জেলেনস্কি। এবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের এহেন বক্তব্যের বিরোধিতা করলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার। জেলেনস্কিকে ফোন করে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন তিনি।
জো বাইডেন ক্ষমতায় থাকাকালীন আমেরিকা হাত খুলে সাহায্য করেছে ইউক্রেনকে। মার্কিন অস্ত্রে বলীয়ান হয়েই রণক্ষেত্রে রুশ ফৌজকে পালটা মার দিয়েছে জেলেনস্কির ‘লিলিপুট’ বাহিনী। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরতেই ইউক্রেনের অনুদানে কাটছাঁট করেছেন। জেলেনস্কিকেও কড়া ভাষায় একের পর এক আক্রমণ শানাচ্ছেন। কয়েকদিন আগে সৌদি আরবের উদ্যোগে মায়ামিতে অনুষ্ঠিত ‘এফআইআই প্রায়োরিটি’ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেখানে সাংবাদিক সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নিশানা করে তিনি বলেন, “নির্বাচন ছাড়াই ক্ষমতায় রয়েছেন জেলেনস্কি। তিনি তো একনায়ক। তাঁর উচিত এখনই ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া। নাহলে দেশের আর কিছু থাকবে না।” পালটা ট্রাম্পকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টও। তিনি বলেন, “পুতিনের তৈরি মুর্খের স্বর্গে বাস করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।”
বলে রাখা ভালো, ২০১৯ সালে নির্বাচন জিতেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন জেলেনস্কি। ২০২৪-এ তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাঝে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ ঘোষণা করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেই থেকেই রণক্ষেত্রে আগুন ঝরাচ্ছে দুদেশের সেনা। আর ইউক্রেনের আইন অনুযায়ী যুদ্ধের সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় না। তাই এখনও দেশের রাশ হয়েছে জেলেনস্কির হাতেই। এই ইস্যুকে ট্রাম্প হাতিয়ার করলেও এবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের পাশে দাঁড়ালেন স্টার্মার। জেলেনস্কিকে ফোন করে তিনি পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন।
রয়টার্স সূত্রে খবর, স্টার্মারের দপ্তরের থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, জেলেনস্কি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একজন নেতা। এই বিষয়ে তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। যুদ্ধের সময় নির্বাচন বন্ধ রাখার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনও এমনটাই করেছিল। ভবিষ্যতে রাশিয়াকে কোনও রকম আগ্রাসান থেকে দূরে রাখতে আমেরিকার প্রচেষ্টাকেও সমর্থন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ইউক্রেনের পাশে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই স্টার্মার জানিয়েছিলেন, যদি প্রয়োজন পড়ে আমাদের সেনা ইউক্রেনে পাঠানো হতে পারে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে, আমাদের মহাদেশকে বাঁচাতে এবং অবশ্যই ব্রিটেনকে রক্ষা করতেই যে কোনওপদক্ষেপ করতে পারি।” স্টার্মারের এমন মন্তব্যকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। আসলে মনে করা হচ্ছে, ট্রাম্পের রুশ নীতি বদলে ইউক্রেনের উপর বিরূপ হওয়ায় কেবল তিনিই নন, ইউরোপের অন্য দেশের নেতারাও উদ্বিগ্ন।
২০২২ সালে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ব্রিটেনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে। গত বছরের শেষদিকে ইউক্রেনের উপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছিল ব্রিটেন। যার অর্থ রাশিয়ার বিরুদ্ধে স্ট্রম স্যাডো মিসাইল ব্যবহার করতে পারবে জেলেনস্কির দেশ। ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর কথা বলে আরও চাপ আরও বাড়াল ব্রিটেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.