সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সেনা ও আধাসেনার লড়াইয়ে সাধারণ মানুষের জন্য কার্যত নরকে পরিণত হয়েছে মুসলিম রাষ্ট্র সুদান। খাবার নেই, জল নেই, চারিদিকে শুধু গুলি ও বোমার শব্দ। তার চেয়েও ভয়াবহ আকার নিয়েছে সাধারণ মানুষের উপর সেনাবাহিনী নির্যাতন। জীবনযুদ্ধে কোনওমতে টিকে থাকা সেখানকার মহিলাদের দাবি, সামান্য খাবারের জন্য সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য করা হচ্ছে তাঁদের। অভিযোগ, খাবার ও জল পেতে মহিলাদের লাইনে দাঁড় করানো হচ্ছে। সেখানে স্পষ্টভাবে সেনার তরফে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, খাবার পেতে হলে আগে যৌন সম্পর্ক করতে হবে তার পর মিলবে খাবার। পেটের তাগিদে সেই নির্যাতন মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন মহিলারা।
গত বছর থেকে গৃহযুদ্ধে রক্তাক্ত সুদানের বড় শহর ওমদুরমান থেকে পালিয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। যারা পালিয়ে যেতে পারেননি তাঁদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। দ্য গার্জিয়ানের এক রিপোর্ট বলছে ওই স্থানে যে সকল মহিলারা রয়েছেন তাঁদের দাবি, বেঁচে থাকার জন্য তাঁদের কাছে এখন একমাত্র রাস্তা হল সেনা জওয়ানদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করা। একাধিক মহিলার বিবৃতি তুলে ধরেছে আন্তর্জাতিক ওই সংবাদমাধ্যম। যেখানে মহিলারা স্পষ্টভাবে জানাচ্ছেন, অসংখ্য মহিলাকে লাইনে দাঁড় করিয়ে তাঁদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করে সেনা সদস্যরা। বিনিময়ে তাঁদের হাতে দেওয়া হয় সামান্য কিছু খাবার ও জল। যা দিয়ে পরিবারের পেট ভরায় তাঁরা। এক মহিলা জানান, এটা ছাড়া আর কোনও রাস্তা নেই আমার কাছে। সেনার কাছ থেকে পাওয়া ওই খাবার বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা ও সন্তানের বেঁচে থাকার রসদ।
সুদানে (Sudan) ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে নেমেছেন দেশটির সশস্ত্র বাহিনীরই দুই জেনারেল- আবদেল আল ফতা আল বুরহান ও জেনারেল মহম্মদ হামদান দাগালো। প্রথম জন সুদানের সেনাপ্রধান এবং ২০১৯ থেকে দেশের সর্বোচ্চ শাসনব্যবস্থার জন্য ভারপ্রাপ্ত কাউন্সিলের প্রধান। দ্বিতীয় জন দেশের আধাসামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স’ (আরএসএফ)-এর প্রধান তথা কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য। দুজন জেনারেলের বিরুদ্ধেই মানবাধিকার ভঙ্গ, লুটতরাজ, নৃশংসতা ও ধর্ষণে মদতের অভিযোগ রয়েছে। গত বছর এপ্রিলের ১৫ তারিখ থেকে চলা লড়াইয়ে যুযুধান দুই পক্ষের কেউই সংঘর্ষবিরতি মানছে না। রক্তক্ষয়ী ক্ষমতার লড়াইয়ে পশ্চিমের দারফুর প্রদেশে কয়েকশো মানুষ নিহত হয়েছেন। রাজধানী খারতুমেও প্রাণ হারিয়েছেন অনেকেই। যুদ্ধের জেরে ১৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এখনও পর্যন্ত।
বিবিসি সূত্রে খবর, আফ্রিকার দেশটিতে চলা এই গৃহযুদ্ধের জেরে ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে অন্তত ৬০ লক্ষ মানুষ। প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই পড়শি দেশ চাদে আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে, দারফুরে গণহত্যা চালাচ্ছে ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স’ ও তাদের সঙ্গী আরব মিলিশিয়াগুলো। অমুসলিমদের নিশানা করছে তারা। ধর্ষণকে যুদ্ধের হাতিয়ারের মতো ব্যবহার করছে তারা। পশ্চিম দারফুরের রাজধানী এল জেনেইনায় ফৌজের সদরদপ্তর দখল করে নিয়েছে আধাসেনা। একটি শরণার্থী শিবিরে হামলা চালিয়ে ৮০০ জনকে হত্যা করেছে আরএসএফ। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং লিবিয়ার পাশাপাশি আরএসএফ-কে রুশ ভাড়াটে যোদ্ধাবাহিনী ওয়াগনারও সহায়তা করেছে বলে পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমের দাবি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.