ইরানের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুখবার।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মাত্র ৬৩ বছর বয়সে কপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। তাঁর মৃত্যুর পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে এবার ইসলামিক দেশটির প্রেসিডেন্টের আসনে কে বসবেন? উঠে এসেছে ইরানের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুখবারের নাম। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, তিনি সুপ্রিম লিডার আয়াতোল্লা খামেনেইর অত্যন্ত আস্থাভাজন বলেই পরিচিত। কে এই মুখবার?
২০২১ সালে বিপুল ভোটে প্রেসিডেন্টের আসনে বসেন ইব্রাহিম রাইসি। ভোটযুদ্ধে তাঁর সামনে টিকতে পারেননি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানি। সেই বছরই ইরানের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন মহম্মদ মুখবার। তিনি খামেনেইর খুব কাছের লোক বলেই পরিচিত। রাইসির সঙ্গেও মুখবারের সম্পর্ক খুব ভালো ছিল। এর আগেও তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন।
১৯৫৫ সালে ইরানের খুজেস্তান প্রদেশের ডেজফুল শহরে জন্ম হয় মুখবারের। ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় তিনি ইরানের সামরিক বাহিনীর শাখা ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের মেডিক্যাল কোরের একজন অফিসার ছিলেন। এর পর ১৯৯০ সালে খুজেস্তানের ডেপুটি গভর্নর হন মুখতার। সেখান থেকেই ইরানের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা নিতে দেখা যায় তাঁকে। ধীরে ধীরে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে উচ্চস্তরের বিভিন্ন নেতৃত্বের সঙ্গে।
২০১০ সালে পারমাণবিক বা ব্যালিস্টিক মিসাইলের কার্যক্রমে যুক্ত থাকার অভিযোগে মুখবারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। কিন্তু তার ঠিক দুবছর পরই সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। এর পর ২০২৩ সালের অক্টোবরে রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের ড্রোন নিয়ে চুক্তি চূড়ান্ত করতে মস্কো যান মুখবার। সেই চুক্তির ক্ষেত্রেও তাঁর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। এবার ইরানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন তিনি। এই মুহূর্তে তাঁরই অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব সামলানোর কথা রয়েছে। ইতিমধ্যেই তাঁর কাছে বিভিন্ন মন্ত্রক থেকে ফোন আসা শুরু হয়ে গিয়েছে। মন্ত্রীসভার জরুরি বৈঠক ডাকার পর ইরান সরকার বিবৃতি দিতে জানিয়েছে, এই ঘটনায় দেশের প্রশাসনিক কাজে কোনও ব্যাঘাত ঘটবে না।
তবে পুরোপুরিভাবে প্রেসিডেন্টের আসনে বসতে গেলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে মুখবারকে। ইরানের সংবিধানের ১৩১ নম্বর ধারা অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টের মৃত্যু হলে সাময়িকভাবে ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সেই পদের দায়িত্ব সামলাবেন। এর পর আগামী ৫০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়া সেরে ফেলতে হবে। কিন্তু অন্তিম সিদ্ধান্ত রয়েছে ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতোল্লা আলি খামেনেইর হাতে। এক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর অনুমোদনের উপরই নির্ভর করছে মুখতারের ভাগ্য।
তবে তেহরান রাজনৈতিক মহল বলছে, ইরানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়ার ক্ষেত্রে মুখবারের রাস্তায় খুব একটা কাঁটা নেই। তিনি খামেনেইর খুব কাছের লোক হওয়ায় রাইসির গদিতে যে মুখবারই বসছেন তা একপ্রকার নিশ্চিত। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাইসির আকস্মিত মৃত্যুতে সেই ভোটপ্রক্রিয়া এগিয়ে এসেছে চলতি বছরের জুলাইয়ে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.