সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তিনি খামখেয়ালি! বেফাঁস মন্তব্য বলে কিছুই নেই তাঁর অভিধানে! আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে ক্যাপিটল, প্রথা না মানাই যেন প্রথা তাঁর কাছে। নিজেই বলেন, এই ‘সাসপেন্স’ই তাঁর ইউএসপি। তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী রাষ্ট্রের সর্বাধিনায়ক। এহেন ট্রাম্প এবার দেখা করলেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট তথা প্রাক্তন আল কায়দা জঙ্গি আবু মহম্মদ আল জোলানির সঙ্গে। স্বাভাবিক ভাবেই এতে ভ্রূকুঞ্চিত সকলের। প্রশ্ন উঠছে, কয়েক দশক পুরনো সন্ত্রাসবাদ নীতি কি বিসর্জন দিলেন ট্রাম্প? আমেরিকার কাছে অস্পৃশ্য সিরিয়া নিয়ে কোন নীল নকশা তৈরি করেছেন তিনি? চিন, রাশিয়ার মতো মহাশক্তিদের খেলার মাঠে ওয়াশিংটনের নতুন বোড়ে কি তবে জোলানি?
চলতি বছরের শুরুর দিকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে বসে প্রাক্তন আল কায়দা জঙ্গি আবু মহম্মদ আল জোলানি বা আহমেদ এল শারা। ফলে, বাশার আল আসাদের পতনে ‘সিরীয় বসন্ত’ বা গণতন্ত্রের নবোদয়ের স্বপ্ন খানখান বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। প্রশ্নের মুখে দেশটির সংখ্যালঘুদের ভবিষ্যৎও। আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তার যথেষ্ট প্রমাণও মিলেছে ইতিমধ্যে। এই প্রেক্ষাপটে বুধবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াধে জোলানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ট্রাম্প। অবশ্যই উদ্যোগের হোতা ছিলেন সৌদি যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন। কথা শেষে বলেন, “ও (জোলানি) সুদর্শন, কড়া ধাতের লোক। আশা করি ভাল কাজ করবে। সংঘাতে দীর্ণ দেশটিকে একসুতোয় বেঁধে রাখতে পারবে বলেই মনে হয়।”
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, শিকি শতাব্দীর মধ্যে ট্রাম্পই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি কোনও সিরীয় রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন। শুধু তাই নয়, বেনজির এই বৈঠকের আগে সিরিয়ার উপর লাগু কয়েক দশকের নিষেধাজ্ঞাও প্রত্যাহার করে ওয়াশিংটন। এখানেই প্রশ্ন, কেন? ট্রাম্প ব্যবসায়ী. ‘গিভ অ্যান্ড টেকে’ বিশ্বাসী। বিনিময়ে তিনি কী পাচ্ছেন বা পাবেন? চিন, রাশিয়ার মতো মহাশক্তিদের খেলার মাঠে ওয়াশিংটনের নতুন বোড়ে কি তবে জোলানি?
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ সুচিন্তিত। আসাদের পতনে সিরিয়ায় আপাতত দিশেহারা রাশিয়া। মস্কোর কুখ্যাত ওয়াগনার বাহিনীও খানিকটা ব্যাকফুটে। মধ্যপ্রাচ্যে খনিজ সৃমদ্ধ দেশটিতে বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পে শিকড় জমানোর চেষ্টা করলেও খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না চিন। ইরান কোণঠাসা। তাই জোলানিকে হাত করে আধিপত্য কায়েম ও মার্কিন বিনিয়োগের মাধ্যমে মুনাফা আদায়ের বিষয়টি মাথায় রয়েছে ট্রাম্পের। শুধু তাই নয়, ইজরায়েলের সঙ্গে সিরিয়ার শান্তি আলোচনার পথও তিনি প্রশস্থ করছেন। এই নীল নকশায় বোড়ে জোলানি। লক্ষণীয় ভাবে, চুল-দাড়ি ছেটে স্যুট পরে নিজের জেহাদি ছবি মোছা জোলানিয় কার্যত সমঝোতার বার্তাই দিয়েছে। বলে রাখা ভালো, আরব-ইহুদি দ্বন্দ্ব মেটাতে ‘যুগান্তকারী’ পদক্ষেপ করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২০ সালে তাঁর জমানায় সই হয়েছিল আব্রাহাম অ্যাকর্ড। এবারও সিরিয়ায় তেমনই কোনও চমকপ্রদ পদক্ষেপ করবেন তিনি।
কে এই জোলানি?
২০ বছর বয়স থেকেই জেহাদি কার্যকলাপে হাত পাকায় জোলানি। নামে যুদ্ধের ময়াদানে। ২০০৩ সালে ইরাকে ঢুকে মার্কিন সেনার সঙ্গে লড়াইয়ে শামিল হয়। ধরা পড়লে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে থাকা ইরাকের কুখ্যাত কারাগার ক্যাম্প বুকায়। তবে সেই জেল থেকে পালিয়ে সিরিয়ায় ফিরে আসে জোলানি। তারপর তৎকালীন বাসাদ সরকারের বিরুদ্ধেই লড়াই শুরু হয় তার। আর এই জোলানির মাথায় হাত ছিল ইসলামিক স্টেটের প্রতিষ্ঠাতা আবু বকর আল বাগদাদির। এভাবেই শক্তি বৃদ্ধি হয় জোলানির। এরপর আল কায়দার সঙ্গে হাত মিলিয়ে জাভাত-আল-নুসরা নামে এক জঙ্গি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু ২০১৬ সালে আল কায়দার সঙ্গে জোট ভাঙে জোলানির। তার এই সংগঠনই পরে তাহরির আল শামের নাম নেয়। এখন এই জেহাদিই সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের গদিতে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.