গৌতম ব্রহ্ম: দূষণ ছোবল বসাচ্ছে ফুসফুসে, হার্টেও। ডেকে আনছে লাং ক্যানসার, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, সিওপিডির মতো অভিশাপ। ভারতীয় মেট্রো শহরগুলির মধ্যে দূষণের র্যাংঙ্কিংয়ে কলকাতা তিন নম্বরে উঠে এসেছে। দিল্লি, বেঙ্গালুরুর পরেই। কলকাতার এই ‘প্রোমোশন’ চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে শহরবাসীর কপালে। যাঁরা বক্ষরোগে ভুগছেন তাঁদের শ্বাসকষ্ট গত দু’মাসে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। নতুন করে হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস ধরা পড়েছে বহু মানুষের। এমনটাই পর্যবেক্ষণ বিখ্যাত বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অলোকগোপাল ঘোষালের। জানালেন, ব্রঙ্কোস্কোপি করাতে গিয়ে চমকে উঠছি। শ্বাসনালি দখল করে আছে ‘মিউকাস অ্যান্ড পাস’। দূষণে কলকাতা আসলে এক নম্বরে। রবীন্দ্রভারতী ক্যাম্পাসে মাপা হয় বলে দূষণ কম দেখায়। বড়বাজার এলাকায় মাপলে বোঝা যেত। ৩২টা সিগারেট সেবনের সমান দূষণ। ভয়ংকর অবস্থার মধ্যে আমরা বাস করছি। রোগীর সংখ্যা গত তিন মাসে দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে। সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষও বক্ষরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। শিশু-বৃদ্ধাদের হাল সবচেয়ে খারাপ।
৫ নভেম্বর থেকে একবারের জন্যও কলকাতার ‘এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স’ (একিউআই) আড়াইশোর নিচে নামেনি। বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা বা আণুবীক্ষণিক ‘পার্টিকুলেট ম্যাটার’ (পিএম ২.৫)-এর গড় মাত্রা ৪১২। সাধারণত কালীপুজোর পর একিউআই কমতে থাকে। কিন্তু এবার তা হয়নি। ফলে ফুসফুস, হার্টের উপর চাপ বাড়ছে। ডাক্তারদের চেম্বার উপচে পড়ছে ‘আপার ট্রাক্ট ইনফেকশন’-এর রোগীতে। সমস্যা হচ্ছে, দূষণের মধ্যে থাকার দরুণ রোগ সারতেও অনেক বেশি সময় নিচ্ছে। ডা. অরিন্দম বিশ্বাস জানালেন, আসলে পিএম ২.৫ অত্যন্ত ভয়ংকর। বিনা বাধায় ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে। হার্টের রোগ, স্ট্রোক, ফুসফুসের ক্যানসারের বীজতলা তৈরি হচ্ছে।
২০১৩ সালে ইউরোপে মানব ফুসফুসে দূষণের প্রভাব নিয়ে ৩ লক্ষ মানুষের উপর সমীক্ষা চালানো হয়। দেখা যায়, পিএম ২.৫ প্রতি বছর ৪.১ মিলিয়ন মানুষকে খুন করে। অলোকগোপালবাবু জানালেন, দূষণের সঙ্গে বক্ষরোগের সরাসরি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রমাণ হয়েছে, দূষণের জন্য বহু মানুষ বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছেন। বহু মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। আগে ৮-১০ শতাংশ মানুষ হাঁপানিতে আক্রান্ত ছিল। এখন ২০ শতাংশ হাঁপানির শিকার। অলোকগোপালবাবুর প্রেসক্রিপশন, এই দূষণ রাতারাতি কমানো যাবে না। ততদিন শিশু ও বৃদ্ধাদের একটু সামলে রাখতে হবে। বুদ্ধি করে চলতে হবে। যেমন-শিশুদের স্কুল টাইম বদলাতে হবে। তীব্র যানজটের সময় স্কুলে পাঠানো যাবে না। দূষণের মাত্রার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেদিন বেশি হবে সেদিন ঘরে বসেই কাজ সারার চেষ্টা করতে হবে। মর্নিং ওয়াকে যাওয়া যাবে না। বাড়িতে মানিপ্ল্যান্ট লাগাতে হবে। বাড়িতে বাগান করা গেলে খুব ভাল।
বড়বাজারের মতো এলাকায় দূষণ এত বেশি যে সাধারণ মাস্ক পড়লে কোনও কাজ হবে না। দু’টো পড়তে হবে। নয়তো ব্যবহার করতে হবে এন ৯৫ মাস্ক। শ্বাসকষ্ট হলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ব্রঙ্কোস্কোপি করাতে হবে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, গ্রীষ্মকালে বায়ু সঞ্চালন বেশি হয় বলে দূষণ এক জায়গায় আটকে থাকে না। কিন্তু নভেম্বর থেকে জানুয়ারি এই সময় মাটি কম গরম হয়। ফলে, বায়ু সঞ্চালন কম। দূষণ ঘাঁটি গেড়ে থাকে এক জায়গায়। তাতেই হয় সমস্যা। ডাক্তারদের পরামর্শ, কলকাতার যা অবস্থা তাতে নভেম্বর-জানুয়ারি বাইরে কাটিয়ে এলে ভাল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.