স্টাফ রিপোর্টার: সালটা সম্ভবত ২০১০। ঠিক মনে করতে পারলেন না বেহালার বছর পঁচাত্তরের অমিয় ঘোষ। মোহনবাগানের অনূর্ধ্ব-১৮ দলে ট্রায়াল দিতে জঙ্গলমহল থেকে এসেছিলেন এক ফুটবলার। টিনএজ ফুটবলারটির এলাকা তখন মাওবাদীদের কবলে। প্রাণে বাঁচাই একরকম দায়। তবু মাথা তুলে সমাজে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন সেই ফুটবলার। ভরসা বলতে ছিল চামড়ার গোলাকার বস্তুটি।
প্রথমদিনই প্র্যাকটিসে সেই টিনএজার নজর কেড়েছিলেন কোচ অমিয় ঘোষের। কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “তোর বাড়ি কোথায় বাবা?” পশ্চিম মেদিনীপুর শুনে চমকে উঠেছিলেন অমিয়। “সে কী রে? ট্রায়াল তো এখন কয়েকদিন চলবে। তুই যাতায়াত করবি কী করে? বাড়ি ফিরতে যে সন্ধে হয়ে যাবে। আর তখন তো ওসব জায়গায় বিপদই বিপদ।” শুনেও মুখে নিষ্পাপ হাসি নিয়ে ছেলেটি সেদিন বলেছিলেন, “অসুবিধা হবে না স্যার। স্টেশনেই ক’টা রাত কাটিয়ে দেব।” শুনে সেদিন সেই ছেলেটিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন অমিয়। তারপর বেশ কিছুদিন বেহালাই হয়ে উঠেছিল ছেলেটির ঠিকানা।
[মেহতাবের চোট গুরুতর নয়, আইএফএ কর্তাদের আচরণে ক্ষুব্ধ মোহনবাগান]
সেই ছেলেই রবিবারের ডার্বিতে সুপারস্টার। বাঘা বাঘা নামকে পিছনে ফেলে তাঁর নাম ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হিসাবে ঘোষিত হয় যুবভারতীতে।
পিন্টু মাহাতো। এই পিন্টু মাহাতোই গতবার সুযোগ না পেয়ে দল ছাড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু কোচ শংকরলাল চক্রবর্তী ও দুই কর্তা সৃঞ্জয় বোস, দেবাশিস দত্ত তাঁকে বুঝিয়ে রেখে দেন। কোচ কথা দেন এবার সুযোগ দেবেন। পুরনো ছাত্রর সঙ্গে সোমবার মোহনবাগানের মধ্য কলকাতার মেসে দেখা করতে এসেছিলেন অমিয়। সঙ্গে তাঁর বর্তমান এক ছাত্র। উদ্দেশ্য, পিন্টুকে দেখিয়ে তাঁকে উদ্বুদ্ধ করা। ততক্ষণে সেখানে জমে উঠেছে মিডিয়ার ভিড়। চব্বিশ ঘণ্টার আগের বড় ম্যাচের নায়ক বলে কথা। পিন্টুর একটা ছবি, একটু বক্তব্য না পেলে চলে? সবুজ-মেরুন সদস্য-সমর্থকরা তো তাঁদের নতুন নায়ক সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে আগ্রহী। তবে সম্পূর্ণ ভিন্ন সিদ্ধান্ত ছিল পিন্টুর ক্লাবের। হঠাৎ পাওয়া প্রচারে যাতে মাথা ঘুরে না যায়, তাই সযত্নে তাঁকে আড়াল করতে চেয়েছিলেন কোচ শংকরলাল চক্রবর্তী। তাতে ভুল নেই। কিন্তু অদ্ভুত কাণ্ড করল মোহনবাগানের একাংশ।
[অ্যাকোস্টার গোলই ডার্বির টার্নিং পয়েন্ট, একমত বাস্তব-শংকরলাল]
সংবাদমাধ্যম কথা বললে তাঁর মাথা ঘুরে যেত কি না সেটা হয়তো তর্কের বিষয়। এক্ষেত্রে পিন্টুকে তাঁর ফুটবল-গুরুর থেকেও দূরে সরিয়ে রাখা হল!
প্রথমে অমিয়কে বলে দেওয়া হয়, পিন্টু মেসে নেই। হতাশ হয়ে তিনি যখন ফিরে যাচ্ছেন, সংবাদমাধ্যমের থেকে জানতে পারেন খবরটা ভুল। এরপর অমিয় সরাসরি ফোন করেন পিন্টুকে। তবে ছাত্রকে বলেননি, তিনি মেসের সামনে আছেন। শুধু জানতে চান পিন্টু কী করছেন? ঘুম-জড়ানো গলায় উত্তর আসে, ঘুমোচ্ছি। এরপর আর দাঁড়াতে চাননি অমিয়। পরে পিন্টুর গুরু বললেন, “ও ঘুমোচ্ছে। তাই বিরক্ত করলাম না। সকালে আবার প্র্যাকটিস। রেস্ট নেওয়া দরকার। কিন্তু আমায় মিথ্যে কথাটা না বললেই হত। তবে বেচারা কেয়ারটেকারকেও দোষ দেওয়া যায় না। হয়তো ক্লাবের কারও নির্দেশেই এটা করেছে। আসলে আমার বেশ কয়েকজন ছাত্রকে পরের দিকে মাঠ থেকে হারিয়ে যেতে দেখেছি। কিছুতেই চাই না পিন্টুরও তাই হোক। আমার আশীর্বাদ সবসময় ওর সঙ্গে আছে। আমাদের দেখা ঠিকই হবে।” ছাত্রর সঙ্গে দেখা করতে না পারায় মনখারাপ নিয়েই ফিরলেন অমিয় ঘোষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.